চমক
চায়ের কাপে চামচ নাডতে নাডতে চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল বিতান।
চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বললো অদিতি।
কিন্তু ওতো দামি চা টাও বিস্বাদ লাগছিলো বিতানের।
অদিতর কথাগুলো কানে বাজছে
আজ থেকে আর কোন যোগাযোগ নয়, ফোন নয় সব শেষ। হ্যাঁ এভাবেই চা চুমুক দিতে দিতে
কথাগুলো বললো অদিতি
_দেখো বাবা মার বযস হয়েছে আর আমারও তো 34 হলো তুমি তো এতদিনেও কিছু
জোগাড় করতে পারলে না। তাদের আমি আর কিভাবে ঠেকিয়ে রাখবো বলো।_
_আমি তো চেষ্টা করছি অদিতি, না কথাগুলো বলতে পারলো না বিতান।
আজ থেকে আর কোনোমতেই যোগাযোগ করো না বিতান। কথাটা বলে
ধীর পায়ে উঠে বাস স্ট্যান্ডে র দিকে চলে গেলো অদিতি।
আজ অনেকদিন আগের সেই আলাপের প্রথম দিনটা মনে পড়ে গেলো বিতানের।
কাকতালীয় ভাবেই আলাপ হয়েছিলো তাদের
মনে আছে রানীর বাড়ি দমদম থেকে ফিরছিলেন বিতান, কিন্তু স্টেশন এসে শুরু হলো
মুষলধারে বৃষ্টি, ছাতা ছিলো না, এমনিতে ছাতা নেবার অভ্যাস নেই বিতানের তারপর এটা বর্ষা কাল ও নয় তাই সেডের তলায় দাড়িয়ে ছিলো ট্রেনে র অপেক্ষা য।
ঐ সময় একটি মেয়ে প্রায় কাকভেজা হযে এসে দাডালো কোনোমতে আঁচল দিয়ে
মাথা মুছতে মুছতে প্রশ্ন করলো
_আচ্ছা রানাঘাট লোকাল কি চলে গেছে? জানি না বলতে পারবো না বললো বিতান
_আপনি কোথায় যাবেন?
_রানাঘাট, আপনি
_নৈহাটি
এভাবেই দুচার কথার পর ওর ট্রেন চলে আসতে আর কথা এগোয়নি
এরকম ঘটনা প্রাযশ ই ঘটে নিত্য যাতায়াত পথে কত পরিচয় হয় তাই সেভাবেই
এ ঘটনা মনে দাগ কাটে না এবং বিতান ভুলেও যায় কিন্তু আবার কিছুদিন পর ঐ
একই স্টেশনে আবার দেখা হয় দুজনের
এরপর প্রায় ই দেখা হতে হতে আলাপ টা একদিন ঘনিষ্ঠতা য যায়। কথায় কথায়
জানতে পারে বিতান
অদিতি র বাড়ি রানাঘাট কিন্তু ও ইচ্ছে করেই দমদম মতিঝিল কলেজে ভর্তি হয়েছে
কারন টা আর কিছু ই নয় ওর কোন একজন প্রিয় কবি যিনি এই কলেজের ইতিহাসের
অধ্যাপক তারই টানে এতদূরে পড়তে আসা।
বিতান ও জানায় তাকে তার বেকার জীবনের কথা কযেটা টিউশনি ভরসা আর চাকরীর
চেষ্টা র গল্প।
এভাবেই ফোন নং দেওয়া নেওয়া হয় কিন্তু কেউ কাউকে ফোন করেনা। ্
এরপর একদিন রানিকে নিয়ে ফিরছিলো বিতান
ইদানিং রানির প্রতি তার শ্বশুর বাড়ি র নির্যাতন টা বেশ বাড়াবাড়ি র পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু মা আশ্চর্য রকমের উদাসীন ছিলো এ ব্যাপারে বিতান ভাবতো সাংসারিক টানাটানিই এর কারন কিন্তু না বিতান দেখেছে মায়ের সেরকম কোন টেনশন নেই রানিকে নিয়ে।
বরং বিতান মাঝে মাঝেই ওর বাড়ি যায় বলে বেশ বিরক্ত বলেন ওর সংসার ওর মতো করে করতে দাও ওর বাবাই তো বিয়ে দিয়ে গেছেন।
তখন বিতান ভাবতো হয়তো এ বিয়েতে মার মত ছিলো না তাই মা এখন উদাসীন আর বাবাও তো রানির বিযের তিন বছরের মাথায় মারা গেছেন।
তখন বিতান ছোট ছিলো তাই কিছু বুঝতে না রানি ওর থেকে দশ বছরের বড় কিন্তু এখন সে বড় হয়েছে এরকম অরাজকতা চলতে দেবে না যেভাবেই হোক রানিকে দুবেলা সম্মানের অন্ন যোগাবে
তাই সেদিন রানিকে সংগে নিয়ে ই ফিরছিলো বিতান
দূরে অদিতি কে দেখতে পেয়ে সামনের কমপারমেন্টে ই উঠে পড়লো রানিকে নিয়ে
না, বিতান চাযনি রানিকে নিয়ে কেউ অযথা কৌতুহল দেখাক।
সে রাতেই অদিতির প্রথম ফোনটা এসেছিলো।
বিতানের বুক টা দুরুদুরু করছিলো
ও ভেবেছিলো অদিতি মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে আজ ও অদিতি কে এডিযে গেছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অদিতির মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনা যায়।
_কেমন আছো?
-_ভালো তুমি?
_আমিও ভালো, অনেকদিন দেখি না তাই অনেক দ্বিধা দন্ধে থেকেও ফোন টা করেই ফেললাম।
_না না, তাতে কি, ভালোই করেছো ফোন করে নং দেওয়া টা সার্থক হলো
মনে মনে বললো বিতান যাক বাবা তাহলে রানিকে আর তাকে একসাথে দেখেনি অদিতি।
তারপর মামুলি দু একটা কথার পর ফোন রেখে দেয় অদিতি।
আজ বছর দশেক হযে গেছে রানির বিয়ের কিন্তু বাচ্চা না হওয়াতে শ্বশুর বাড়ির লোক এবং জয় দা অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছিলো রানির উপর।
বিতান গেলেও একের পর এক নালিশ আসতো রানির নামে যদিও বিতান জানে রানি খুবই ভালো মেয়ে, সাতটি চডেও রা কাডে না।
বাবা থাকতে বাপের বাড়ি যখন আসতো তখন ও দেখতো বিতান মায়ের নানা অসন্তোষ তবুও রানি হাসিমুখে মায়ের সব কাজ করে দিতো।
বাবা মারা যাবার পর রানির আসা বন্ধ হয়ে গেলো।
ছোট থেকে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে বিতান অন্য মেয়েদের যেমন মার সাথে ভাব থাকে সব কথা আদান প্রদান থাকে মার সাথে রানির সম্পর্ক টা ঠিক সেরম নয় এর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাযনি বিতান। আজকের এই আপাত ঘটনা তাকে খুবই আঘাত করে গেলো কিন্তু কি আর করার ছিলো সামান্য টিউশনির ভরসয রানির খরচ নিজের খরচ চালিয়ে আবার একটা সংসার পাতা নিছক অবাস্তব কল্পনা মাত্র।
মন বিষন্ন নিয়ে ই বাড়ি ফিরলো সে।
দরজার মুখ থেকেই রোজকার মতো মায়ের গজগজ শোনা যাচ্ছিল যদিও রানির তাতে কোন হেলদোল নেই, সে এতেই অভ্যস্ত।
ঘরে ঢুকে রানিকে এক গ্লাস জল দিতে বলে জামা কাপড় ছাড়তে চলে গেলো ও।
কিন্তু তার এই মনমরা ভাব রানির চোখ এডায নি, জল দিতে এসে জিজ্ঞেস করে সে
_কিরে ভাই মন খারাপ কেন?
_না রে কিছু না,
_আমার জন্য তোর এই অবস্থা, কি হয়েছে রে, অদিতি কিছু বলেছে?
অবাক হয বিতান, রানি কি করে জানালো সে তো কখনও কিছু বলেনি।
তার অবাক ভাব খেয়াল করে রানি বলে,
_একদিন ফোন এসেছিলো, আমি তুলিনি তুই বাথরুমেছিলিস আমি তখন নামটা দেখি, তোর কাছে তো কখনো কোন মেয়ের ফোন আসে না তাই আন্দাজ করলাম তোর বিশেষ বান্ধবী হবে
তুই কবে নিজে থেকে বলবি তার অপেক্ষা করছিলাম।
_ও তাই বল, না তেমন কিছু না, ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
_সেকি কবে, কোথায়, ছেলে কি করে?
_আরে দাঁডা দাঁডা, এতো প্রশ্ন একসাথে করছিস, আমি ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।
_তুই একটা হাঁদা।
_হবে হয়তো
রানি চলে যেতে একটু সুস্থির হলো বিতান। মনে মনে ভাবল আর কি কি অপেক্ষা করে আছে তার জীবনে। এমন আর কোথাও একটু শান্তি পাওয়া যাবে কি? রাতে এমনই চোখে ঘুম আসতে চায়না রাত জেগে বই পড়ার অভ্যাস অনেকদিনের।
সেদিন অদিতির কাছ থেকে চলে আসার পর দু’মাস কেটে গেছে কিন্তু না ওর দিক থেকে আর কোন খবর আসেনি।
বিতান ভেবেছিলো অন্তত একটা নিমন্ত্রণ পত্র পাবে জাস্ট ফর্মালিটি হিসেবে কিন্তু না সেরকম কিছুই হলো না।
বিতান আবার অভস্থ হযে গেলো বাঁধাধরা জীবনে।
সকাল থেকে একটার পর একটা টিউশন আর বাড়ি।
এরকমই একদিন বাড়ি ফিরে সবে একটু রেস্ট নিচ্ছে দেখলো দরজায় অতিথি জয় দা।
তাহলে কি ভুল বুঝতে পেরে রানিকে নিতে এসেছে।
ভদ্রতা করে বলতেই হলো
_এসো জয় দা ভেতরে এসো। রানিকে হাঁক দিয়ে বললো জয় দা এসেছে একটু চা নিয়ে বাইরের ঘরে আয।
মা কে বেশ প্রফুল্ল দেখালো ভাবলো যাক আপদ বিদায় হবে।
রানি চা নিয়ে এলে জয় দা শুধু একটা কথাই বললো
_আমি আবার বিয়ে করে সংসার করতে চাই তাতে তোমার সম্মতি প্রয়োজন।
ও এই ব্যাপার তার মানে জয় দা ঘুরিয়ে ডিভোর্স এর কথা বলতে এসেছে। সে রানির মুখ চেয়ে
আপ্রাণ বোঝাতে চাইলো জয় দা কে।
বাচ্চা না হওয়া টা রানির দোষ নয়।
তার জন্য এতদিনের সম্পর্কে চির ধরানো উচিত নয়। কিন্তু না জয় দা কোনভাবেই রাজি নয়
এ সম্পর্ক টিঁকিয রাখতে আর রানি যাকে বিতান বেশ নরম সরম মেয়ে বলে জানতো
সে বিতান কে অবাক করে দিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো
_বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে। আমি সই করে দেবো।
এরপর আর জয় দা বসেনি
রাতে খেতে বসে বিতান একটা কথাই বললো
_তুই রাজি হলি কেন? তুই রাজি না হলে কিছু করতে পারতো না।
রানির উত্তর_আমার এমন ভাই আছে তাকে ভরসা করি আমি।
এরপর কোন কথা চলে না।
সত্যি ছোটবেলা থেকে রানি তাকে আগলে রেখেছিলো। তার গায়ে কোন আঁচ লাগতে দেয়নি
অথচ দশ বছরের বড় দিদিকে কেন যে নাম ধরে ডাকা শিখিযেছিলো মা তা জানেনা বিতান।
বড় হবার পর আর নতুন করে অভ্যেস বদলাতে পারেনি বিতান। সেদিন জয় দা চলে যাবার পর
মাকে একটু গম্ভীর দেখলো বিতান।
বুঝতে পারল যে মা রানির এই ডিভোর্স এর ব্যাপারটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না হয়তো মনে মনে বিতানকেই দাযি করছে। বিতান যদি ওকে সাথে করে না আনতে তাহলে বোধহয় ছাড়াছাড়ি টা হতো না আর মা হয়তো এটাও ভাবছে চিরকালের মতো রানির দায়িত্ব বিতানের উপর বর্তালো।
রা নিকে যেমন মা পছন্দ করে না বিতানের বেলায় পুরোপুরি উল্টো সেটা কি শুধুই বিতান ছেলে বলে নাকি একটু বেশি বয়সের সন্তান বলে।
ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে সে যে মা ওকে একটু বেশিই প্রশ্রয় দেয়।
বাবা চলে যাওয়াতে সেটা আরো বাড়ে।
মাঝে মাঝে মায়ের এই পক্খপাতে যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করে বিতান।
কোন কোন সময় ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টি কূটু পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
শরীর খারাপের অছিলায একটু তাড়াতাড়ি ই শুতে যায় আজ বিতান। কিন্তু ঘুম আসতে চায় না তার জীবনের এক একটা বাঁকে কি অপেক্ষা করে আছে কে জানে।
রাত কত আন্দাজ করতে পারে না বিতান রানির ঘর থেকে একটা ফোঁপানো কান্নার আওয়াজ আসে।
উঠে আলো জ্বেলে ঘড়ি দেখে বিতান রাত প্রায় আডাইটের কাছাকাছি এখন ও রানি জেগে আছে? তাহলে কি ও মন থেকে জয় দার সাথে ছাড়াছাড়ি টা মানতে পারেনি।
হ্যাঁ, বিতান জানে রানি দূর্বল মনের সাদাসিধে মেয়ে তাই তখন ঐ কাঠিন্য দেখে চমকে ছিলো বিতান।
কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই ভাগ্যকে মানতে হবে।
ভাগ্য তো আর জলে থাকা মাছ নয় যে জ্বাল ফেলে ধরবো কৌশলে ফেলবো আর হাতে ভস্ম মেখে পিছলে যেতে দেবো না।
তাই যদি হতো তাহলে বিতান এতদিনে এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে বেকার বসে থাকতো না।
আস্তে আস্তে রানির ঘরের দিকে গেলো বিতান দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল।
বিতান দেখলো দরজা আলগা করে ভেজানো ছিল।
ঘরে ঢুকতেই চোখ মুছে উঠে এলো রানি।
_কিরে ঘুমোস নি?
_তুই ও তো ঘুমোস নি, কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
_আমার কেমন ভাগ্য তাই ভেবে।
_কেন আমাকে ভরসা করিস বললি এই তার নমুনা?
_না রে তোকে ভরসা করি ঠিকই কিন্তু ভাগ্যকে ভরসা করতে পারছি না
বিতান দেখলো খাটের উপর একটা ডায়েরি পরে আছে।
জিজ্ঞেস করলো
_কার ওটা তোর?
_না, বাবার লেখা, এই পুরোন কথা পড়ছিলাম।
এবার বিতান বুঝতে পারে যে জয় দার জন্য নয় আসলে রানি বাবার কথা মনে পরাতে কাঁদছে ও বাবার খুব আদরের ছিলো আজ এই অসহাযতার দিনে বাবাকে মনে পড়ছে।
ও ঘর থেকে চলে আসে।
পরের দিন নিছক কৌতুহলী হযেই বাবার ডায়েরি টা ওর ঘর থেকে নিয়ে আসে বিতান
রাতের বেলা আস্তে আস্তে মেলে ধরে খাতা খানা।
প্রতি পাতায় লুকিয়ে আছে রহস্য।
জানতে পারে বিতান রানির কান্না র রহস্য।
পরতে পরতে থমকে যায় সে এতো কষ্ট রানির জীবনে, জানতে পারে সে রানি মাত্র 5 বছর বয়সে তার মাকে হারায়, তারপর বিব্রত মুখার্জি পুনরায় দার পরিগ্রহ করে ওকে মানুষ করার জন্য।
এতক্ষনে পরিষ্কার হয় বিতানের কাছে কেন মা রানিকে পছন্দ করে না, রানির ভাগ্যের কি আশ্চর্য পরিহাস, এক মেয়ে শিশু কালে মা হারা সে নিজে যখন মা হতে চায় তখন শিশু হারা
কি চমৎকার না, একটি নারী না পেলো মায়ের স্বাদ না পেলো মাতৃত্বের স্বাদ।
আর ভালো লাগলো না পড়তে আর কি কি লুকিয়ে আছে পাতার খাঁজে খাঁজে জানতে মন চাইলো না। শুধু একটাই প্রতিজ্ঞা সে সবটুকু দিয়ে রানিকে ভরিয়ে রাখবে বাবা মা সন্তান সব ঘাটতি ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবে।
তার নিজেকে দায়ী মনে হলো এসবের জন্য সে না এলে রানি বঞ্চিত হতো না
স্বাভাবিক ভাবেই এক নারী যখন নিজের সন্তান ধারন করে তখন তার উপরেই স্নেহ বেশি যায় আর সে যদি পুত্র হয় তবে তো কথাই নেই।
বাবার খাতা থেকেই জেনেছে ও যে তার জন্মের পরেই মা কেমন রানির থেকে দূরে সরে যায়
বাবা ভেবেছিলো বেশি বয়সের সন্তান বলেই বুঝি এমন কিন্তু তানা আসলে আপন পর ব্যাপারটা মা উপলব্ধি করছিলো। তাই বিতানকেও দশ বছরের দিদিকে দিদি ডাকতে শেখান নি উনি।
মাযের প্রতি সব শ্রদ্ধা টা যেনো এক নিমেষে উবে গেলো বিতানের।
এর পর থেকে রোজ ই ফেরার পথে রানির জন্য আনতে লাগলো চকোলেট, শাড়ি, বই রানি র অপ্রস্তুত ভাব দেখে বলেই ফেললো ছোটবেলা থেকে এসব থেকে বঞ্চিত করেছি আজ তোকে ছোটবেলা ফিরিয়ে দিতে পারবো না কিন্তু তোর জন্য এটুকু আমায় করতে দে।
এভাবেই আবার তাদের সংসার চলছিলো
একদিন বাড়ি ফিরেই আনন্দ এর খবর এলো, রানি এসে একটা চিঠি দিলো তার হাতে প্রথমে ওটা অদিতি র চিঠি ভেবে খুলে দেখলো সত্যিই দারুন খবর, গত পাঁচ ছ মাস আগে একটা ইন্টারভিউ দিযছিলো এরকম তো কতই দেয় ডাক আসে না আবার ভুলেও যায় কিন্তু সত্যি
ডাক এসেছে, সামনের মাস থেকে জযেনিং
উজ্জ্বল মুখে রানিকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে বিতান বলে_চাকরি হযে গেছে
এখন 25 হাজার দেবে তুই আমার জীবনে ভীষন লাকী রে
_আমি? আমি আবার কি করলাম, এই চাকরি টা যদি তোর কয়েকমাস আগে হতো তাহলে আজ তোর কাছে অদিতি থাকতো।
ভুলে যাওয়া কথা আবার মনে পরতে মন বিষন্ন হয়ে গেলো মুখে বললো
_বাদ দে, দেখনা তোকে এবাডিতে আনার পরেই আমার চাকরি হলো আজ অনেকরাত হযে গেছে কাল মিষ্টি খাওয়াবো।
রানির কথায় বিতানের আবার পুরোন কথা মনে পড়ে গেল সত্যিই সেই দিনের পর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই
আশা করেছিলো বিতান একটা নিমন্ত্রণ চিঠির বা একটা ফোনে র
আজ এই আনন্দের খবর টা দিতে ইচ্ছে করলেও নিজেকে সংযত করলো বিতান।
যদি বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কোথায় আছে কি ভাবে আছে না ফোন করা উচিত হবে না
তারা দু ভাইবোন মিলেই এই খুশী ভাগ করে নেবে
বিতানের জীবনের ছোট ছোট চমক গুলোর মধ্যে আজকের টা সত্যিই সুখের চমক
কাল আগেই সকালের টিউশন গুলো বাদ যাবে এটা জানাতে হবে রাতের গুলো অফিস ফেরত করে নেবে কারন তার অনেক টাকার দরকার রানিকে সুখে রাখার জন্য।
রানি হয়তো শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ওকে ওতো খাটতে নিষেধ করবে কিন্তু না ও কোন কথাই শুনবে না।
পরের মাসে
প্রথম অফিস গিয়ে ভালোই অভিজ্ঞতা হলো। একটু ভয় ভাব ছিলো কিন্তু কিছুদিন যেতে সে বুঝলো কলিগ রা সব ভালোই বেশ বন্ধু হয়ে গেলো
একটু কাজের চাপ থাকলেও ম্যানেজমেন্ট অতো টা নিষ্ঠুর নয় যেমন সে শুনে এসেছে এতকাল।
অফিস পরিবেশ সে বেশ মানিয়ে নিলো কিছুদিনের মধ্যেই। রানি খুশি মা খুশি শুধু সে নিজে যেনো পুরোপুরি খুশিটা আনতে পারছে না, হয়তো রানির কথাই ঠিক, আর কয়েকমাস আগে হলে সে পুরোপুরি সুখি মানুষ হতো।
বিতান গুনতে থাকে মনে মনে তার জীবনের চমক গুলো কি কি
1_আচমকা ভাবে অদিতর সাথে আলাপ
2_রানির ফিরে আসা আর ডিভোর্স
3_অদিতির চলে যাওয়া
4_রানির শিশুকাল জানা যা অজানা ছিলো
5চাকরি পাওয়া
জানেনা বিতান বিধাতা আর কোন লুকোনো দেওয়াল সামনে রেখেছে কি না।
আপাতত সে বেশ ভালোই আছে।
জাগতিক নিয়মে দিন কেটে যাচ্ছিল, সংসার কিছুটা সচ্ছলতার মুখ দেখলো
বেশ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন।
অনেকদিন পর বাড়িতে আবার আগের মতো ভালো মন্দ খাওয়া হাসি আনন্দ সব ফিরে আসছিলো কিন্তু আবার হঠাৎ ই মোড় ঘুরে গেলো।
অন্য দিনের মতোই টিফিন টাইমে চুটিয়ে আড্ডা হচ্ছিল হঠাৎ ই সেই ভুলে যাওয়া রিং টোন
সকলের মাঝ থেকে উঠে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলো ফোন, মনে আবার অন্য অনুভুতি।
অস্ফুটে বললো_হ্যালো
_একবার দেখা করবে সেই পুরোন রেস্তোরাঁ তে
বুকের ভেতর আশার আলো
_যাবো, কখন বলো
_এই ধরো 7 টা নাগাদ
_ওকে
ফোন কেটে গেলো
তাহলে কি মত বদলেছে অদিতি, বিয়ে ক্যানসেল করে আবার তার কাছেই ফিরে আসবে
এসব নানা কল্পনা জ্বালে কোনমতে অফিস টাইম পার করলো
বেশ হাঁফাতে হাঁফাতেই এসে পৌছলো সেই চেনা রেস্তোরাঁ তে
চেনা টেবিল টাতে বসলো
মুকুল বলে ছেলেটা হাসিমুখে এগিয়ে এলো, জল দিলো
ও জানে অদিতি না এলে বিতান খাবারের অর্ডার দেবে না।
প্রায় মিনিট পনেরো পর অদিতি এলো।
চোখ কালি, মুখে বিবর্ন ছাপ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন ঘুমোযনি, খায় নি খুব উদভ্রান্তের মতো
দেখাচ্ছে তাকে।
বিতান একটু হাসার চেষ্টা করলো
চেয়ার টেনে বসেই চায়ের অর্ডার দিলো অদিতি
কোন কুশল খবর না নিয়েই আচমকা ব্যাগ থেকে বের করলো একটা মোটা খাম। ইতিমধ্যে মুকুল চা দিয়ে গেছে।
আচমকা প্রশ্ন করে অদিতি
_আচ্ছা তোমার এক দিদি আছে না?
_হ্যাঁ,
আলগোছে বলে বিতান, মনে মনে ভাবে কি করে রানির খবর জানলো
আবার জিজ্ঞেস করে
_আচ্ছা, তোমার বাবার নাম তো বিব্রত মুখার্জি
_হ্যাঁ,
_ঠিক জানো
_এ আবার কি ধরনের কথা, বাবার নাম জানবো না
_এমনই মজা করলাম
বলেই ব্যাগ গুছিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ই উঠে পড়লো আর যেতে যেতে বলে গেলো
_বাড়ি গিয়ে খামটা খুলে পড়ে দেখো, আমার মনে হয় না সবটা জানার পর আর তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে
এ আবার কি হেঁয়ালি।
অদিতি কি জানেনা সে যেমন ই হোক যাই হোক বিতান তাকে গ্রহন করতে প্রস্তুত।
অদিতি চলে যাবার পর চা টা শেষ করে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে পরে বিতান।
মন ছটফট করে কতক্ষণে বাড়ি ফিরে খামটা খুলে ভিতরের রহস্য উন্মোচন করবে
যদি অদিতির জীবনে গোপন কোন ঘটনা থেকেও থাকে তবুও সে অদিতিকে ঘরে আনবে।
সেদিন সারা রাস্তা ছটফট করে কাটলো যেন পথ অনন্ত, তার আর শেষ নেই
বাড়ি ঢুকেই ঘোষনা করে দিলো সে রাতে খাবে না
খেয়ে এসেছে আর অফিসের দরকারি কিছু কাজ আছে কেউ যেনো তাকে বিরক্ত না করে।
জামা ছেড়ে বেশ ঠান্ডা হয়ে গুছিয়ে বসলো বিতান নতুন রহস্য উন্মোচন করতে।
খামটা খুলে ফেলতেই বেরিয়ে এলো কিছু পুরোন চিঠি আর একটা খাতা।
এক নিঃশ্বাসে চিঠি গুলো পড়তে শুরু করলো সে।
এক মহিলার লেখা তার প্রেমিককে।
কোন নাম নেই শুধু লেখা
তোমাকে
পরপর বেশ কয়েকটি চিঠি পড়ে বিতান যে মর্ম উদ্ধার করলো তা হলো এই
কোন এক মেয়ে ভালোবাসতো একজনকে এরপর কোন কারন বশতঃ সেই মানুষ টি চলে যায়
দূরে কাজের জন্য, এবং এই সুযোগে এক সুপাত্রের সন্ধান পেয়ে মেয়েটির বাবা মা তার বিয়ে দেন
অবশ্য কিছু টা মানবিকতার খাতিরেও তারা মেয়েটিকে বিয়ে দেন
কারন আর কিছু নয় ঐ সদা হাসিখুশি সৎ মানুষটির স্ত্রী মারা যেতে তিনি অসহায় বোধ করেন
প্রথম দিকে পডশী হিসেবে ঐ বাচ্চা মেয়েটির দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেও পরে তারা নিজের মেয়েটির বিয়ে দিতে চান এবং মেয়েটি ও তখন তার প্রেমিক টির কাছ থেকে কোন খবরাখবর না পেয়ে রাজি হয়ে যায়।
এরপরের ঘটনা কিছু নয় তারা ভালোভাবেই সংসার করতে থাকে কিন্তু গোল বাঁধে বছর 5 পরে
ঐ প্রাক্তন পুরুষটি ফিরে আসে এবং আবার খোঁজ পায় মেয়েটির
শুরু হয় আবার নতুন উদ্যমে মেলামেশা।
সংসারে অনীহা
ভালোমানুষ স্বামী টি এই পরিবর্তন খেয়াল করে না। এরপর তাদের পুরোন প্রেম আবার বাধাবাঁধন হীন গতি পায়।
অবাধে মেলামেশার ফল স্বরূপ মেয়েটি আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়।
এবার শুরু হয নাটক। না এই সন্তান টি নিতে চায় না পুরুষটি আর মেযেটিও চায় না তার প্রেমিকের দান মুছে ফেলতে।
এই নিয়ে আবার শুরু হয় মনোমালিন্য, নতুন মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে চায় নি সে
শুধু শারীরিক সুখ ভোগের জন্য তাকে এই মানুষটি ব্যবহার করেছে এটা বুঝতে পেরে এই সম্পর্ক থেকে চিরদিনের মতো বেরিয়ে আসে সে আবার সংসারে মন দেয়
তার স্বামী নিতান্ত সহজ মনের লোক, তিনি এই সন্তান কে নিজের বলেই জেনে যান এবং যেহেতু বেশি বয়সের সন্তান তাই স্ত্রী র অধিক যত্ন নিতেও ভোলেন না।
এতটা পরে একটু আর পড়তে ইচ্ছা করে না বিতানের
সে আন্দাজ করতে পারে এ তারই জন্ম বৃত্তান্ত। শুধু বুঝতে পারেনা অদিতি কি ভাবে এত তত্ব সংগ্রহ করলো।
এরপর আর কোন চিঠি নয় অদিতর নিজের লেখা কিছু কথা।
আবার পড়তে শুরু করে বিতান
তার দম বন্ধ হয়ে আসে নিজের প্রতি ঘৃনা হয়।
তবুও সবটা জানতেই হবে।
এরপর অদিতি লিখেছে
এতটা পরে তুমি নিশ্চয়ই জেনে গেছো যে তুমি বিব্রত মুখার্জি র ছেলে নও। আমি কি করে জানলাম তা জানতে ইচ্ছা করছে তোমার।
শোন
প্রথম দিকে তোমার কথা বাপিকে বলতে তার তেমন অমত ছিলো না, কিন্তু যখন তোমাকেই বিয়ে করবো সিদ্ধান্ত নিলাম বাপি তোমার নাম, ঠিকানা জানতে চাইলো আর তারপর থেকেই বেঁকে বসলো
আমি জানতাম তুমি একদিন চাকরি পাবেন, না বেকারত্ব আসল কারন ছিলো না
বাপি কেন প্রথমে রাজি হয়েও পরে মত বদলালো তার কারন অনুসন্ধান করতে শুরু করলাম আমি আর তোমার কাছে যোগাযোগ না রাখার প্রস্তাব রাখলাম আমার কাজের সুবিধার জন্য।
এভাবে গোপনে খোঁজ চালাতে চালাতে যা তথ্য আমার হাতে এলো তা তোমার জনামবৃতান্তের থেকেও মর্মান্তিক।
আমাদের বাড়ি র ছাদে চিলেকোঠার ঘরে একটা বহুদিনের পুরোন অব্যবহৃত সুটকেস ছিলো, নিছক কৌতুহল এর বশে তা খুলে ফেললাম
আজ তোমার হাতে যে চিঠি গুলো তোমাকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে সেদিন ঐ সুটকেস থেকেই ওগুলো পেয়েছিলাম আর যা পেলাম তা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত তাই সেগুলো তোমাকে দিলাম না।
শুধু তোমাকে বলে রাখি শোন
তোমার আমার দেখা হওয়া টা বোধহয় ঈশ্বর নির্দেশিত নয়তো এই গোপন কান্ডের কথা অজানা থেকে যেতো তবে একটা কথা সত্য জেনো যে সত্যি কখনো ও অপ্রকাশিত থাকে না।
হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম
আমি তোমার সব খবর রাখতাম
তোমার চাকরি পাওয়ার খবর ও পেযেছি কিন্তু না একটা অভিনন্দন জানিয়ে ও ফোন করিনি কোন মুখে করবো বলো
আমি যে জেনে গেছিলাম
অনিমেষ রায়, যাকে এতদিন শ্রদ্ধা করে এসেছি আজ তার জন্য ই আমার জীবন বিপন্ন।
হ্যাঁ, তুমি হয়তো আন্দাজ করতে পারছো
আমার বাবা ই তোমার জন্মদাতা
এই চরম সত্য টা মানতে কষ্ট হলেও আমরা নিযতির হাতের পুতুল
আর নয়
এই চিঠি পড়ার পর যখন তুমি সব জানবে তখন আর বোধহয় তোমার আমার দেখা হওয়ার প্রয়োজন হবে না।
আঃ সুখনিদ্রা।
চলি।
আমাকে ভুল বুঝো না।
অদিতি।
সবটুকু শেষ করে স্থানুর মতো বসে রইল বিতান।
শেষ ইংগিত টা ধরতে কোন অসুবিধা হলো না।
কিন্তু বিতান কে বাঁচতে হবে রানির জন্য।
জানলার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভোরের আলো আলগা ছড়িয়ে পরেছে কাগজ গুলোর উপর।
বিতান ভাবে আবার এক নতুন ভোর
আবার নতুন কোন চমক।।।। ।।
চায়ের কাপে চামচ নাডতে নাডতে চুপচাপ কথাগুলো শুনছিল বিতান।
চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে বললো অদিতি।
কিন্তু ওতো দামি চা টাও বিস্বাদ লাগছিলো বিতানের।
অদিতর কথাগুলো কানে বাজছে
আজ থেকে আর কোন যোগাযোগ নয়, ফোন নয় সব শেষ। হ্যাঁ এভাবেই চা চুমুক দিতে দিতে
কথাগুলো বললো অদিতি
_দেখো বাবা মার বযস হয়েছে আর আমারও তো 34 হলো তুমি তো এতদিনেও কিছু
জোগাড় করতে পারলে না। তাদের আমি আর কিভাবে ঠেকিয়ে রাখবো বলো।_
_আমি তো চেষ্টা করছি অদিতি, না কথাগুলো বলতে পারলো না বিতান।
আজ থেকে আর কোনোমতেই যোগাযোগ করো না বিতান। কথাটা বলে
ধীর পায়ে উঠে বাস স্ট্যান্ডে র দিকে চলে গেলো অদিতি।
আজ অনেকদিন আগের সেই আলাপের প্রথম দিনটা মনে পড়ে গেলো বিতানের।
কাকতালীয় ভাবেই আলাপ হয়েছিলো তাদের
মনে আছে রানীর বাড়ি দমদম থেকে ফিরছিলেন বিতান, কিন্তু স্টেশন এসে শুরু হলো
মুষলধারে বৃষ্টি, ছাতা ছিলো না, এমনিতে ছাতা নেবার অভ্যাস নেই বিতানের তারপর এটা বর্ষা কাল ও নয় তাই সেডের তলায় দাড়িয়ে ছিলো ট্রেনে র অপেক্ষা য।
ঐ সময় একটি মেয়ে প্রায় কাকভেজা হযে এসে দাডালো কোনোমতে আঁচল দিয়ে
মাথা মুছতে মুছতে প্রশ্ন করলো
_আচ্ছা রানাঘাট লোকাল কি চলে গেছে? জানি না বলতে পারবো না বললো বিতান
_আপনি কোথায় যাবেন?
_রানাঘাট, আপনি
_নৈহাটি
এভাবেই দুচার কথার পর ওর ট্রেন চলে আসতে আর কথা এগোয়নি
এরকম ঘটনা প্রাযশ ই ঘটে নিত্য যাতায়াত পথে কত পরিচয় হয় তাই সেভাবেই
এ ঘটনা মনে দাগ কাটে না এবং বিতান ভুলেও যায় কিন্তু আবার কিছুদিন পর ঐ
একই স্টেশনে আবার দেখা হয় দুজনের
এরপর প্রায় ই দেখা হতে হতে আলাপ টা একদিন ঘনিষ্ঠতা য যায়। কথায় কথায়
জানতে পারে বিতান
অদিতি র বাড়ি রানাঘাট কিন্তু ও ইচ্ছে করেই দমদম মতিঝিল কলেজে ভর্তি হয়েছে
কারন টা আর কিছু ই নয় ওর কোন একজন প্রিয় কবি যিনি এই কলেজের ইতিহাসের
অধ্যাপক তারই টানে এতদূরে পড়তে আসা।
বিতান ও জানায় তাকে তার বেকার জীবনের কথা কযেটা টিউশনি ভরসা আর চাকরীর
চেষ্টা র গল্প।
এভাবেই ফোন নং দেওয়া নেওয়া হয় কিন্তু কেউ কাউকে ফোন করেনা। ্
এরপর একদিন রানিকে নিয়ে ফিরছিলো বিতান
ইদানিং রানির প্রতি তার শ্বশুর বাড়ি র নির্যাতন টা বেশ বাড়াবাড়ি র পর্যায়ে চলে যাচ্ছিল কিন্তু মা আশ্চর্য রকমের উদাসীন ছিলো এ ব্যাপারে বিতান ভাবতো সাংসারিক টানাটানিই এর কারন কিন্তু না বিতান দেখেছে মায়ের সেরকম কোন টেনশন নেই রানিকে নিয়ে।
বরং বিতান মাঝে মাঝেই ওর বাড়ি যায় বলে বেশ বিরক্ত বলেন ওর সংসার ওর মতো করে করতে দাও ওর বাবাই তো বিয়ে দিয়ে গেছেন।
তখন বিতান ভাবতো হয়তো এ বিয়েতে মার মত ছিলো না তাই মা এখন উদাসীন আর বাবাও তো রানির বিযের তিন বছরের মাথায় মারা গেছেন।
তখন বিতান ছোট ছিলো তাই কিছু বুঝতে না রানি ওর থেকে দশ বছরের বড় কিন্তু এখন সে বড় হয়েছে এরকম অরাজকতা চলতে দেবে না যেভাবেই হোক রানিকে দুবেলা সম্মানের অন্ন যোগাবে
তাই সেদিন রানিকে সংগে নিয়ে ই ফিরছিলো বিতান
দূরে অদিতি কে দেখতে পেয়ে সামনের কমপারমেন্টে ই উঠে পড়লো রানিকে নিয়ে
না, বিতান চাযনি রানিকে নিয়ে কেউ অযথা কৌতুহল দেখাক।
সে রাতেই অদিতির প্রথম ফোনটা এসেছিলো।
বিতানের বুক টা দুরুদুরু করছিলো
ও ভেবেছিলো অদিতি মনে হয় বুঝতে পেরেছে যে আজ ও অদিতি কে এডিযে গেছে।
কাঁপা কাঁপা হাতে ফোন তুলে হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে অদিতির মিষ্টি কন্ঠস্বর শোনা যায়।
_কেমন আছো?
-_ভালো তুমি?
_আমিও ভালো, অনেকদিন দেখি না তাই অনেক দ্বিধা দন্ধে থেকেও ফোন টা করেই ফেললাম।
_না না, তাতে কি, ভালোই করেছো ফোন করে নং দেওয়া টা সার্থক হলো
মনে মনে বললো বিতান যাক বাবা তাহলে রানিকে আর তাকে একসাথে দেখেনি অদিতি।
তারপর মামুলি দু একটা কথার পর ফোন রেখে দেয় অদিতি।
আজ বছর দশেক হযে গেছে রানির বিয়ের কিন্তু বাচ্চা না হওয়াতে শ্বশুর বাড়ির লোক এবং জয় দা অকথ্য অত্যাচার শুরু করেছিলো রানির উপর।
বিতান গেলেও একের পর এক নালিশ আসতো রানির নামে যদিও বিতান জানে রানি খুবই ভালো মেয়ে, সাতটি চডেও রা কাডে না।
বাবা থাকতে বাপের বাড়ি যখন আসতো তখন ও দেখতো বিতান মায়ের নানা অসন্তোষ তবুও রানি হাসিমুখে মায়ের সব কাজ করে দিতো।
বাবা মারা যাবার পর রানির আসা বন্ধ হয়ে গেলো।
ছোট থেকে একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে বিতান অন্য মেয়েদের যেমন মার সাথে ভাব থাকে সব কথা আদান প্রদান থাকে মার সাথে রানির সম্পর্ক টা ঠিক সেরম নয় এর কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পাযনি বিতান। আজকের এই আপাত ঘটনা তাকে খুবই আঘাত করে গেলো কিন্তু কি আর করার ছিলো সামান্য টিউশনির ভরসয রানির খরচ নিজের খরচ চালিয়ে আবার একটা সংসার পাতা নিছক অবাস্তব কল্পনা মাত্র।
মন বিষন্ন নিয়ে ই বাড়ি ফিরলো সে।
দরজার মুখ থেকেই রোজকার মতো মায়ের গজগজ শোনা যাচ্ছিল যদিও রানির তাতে কোন হেলদোল নেই, সে এতেই অভ্যস্ত।
ঘরে ঢুকে রানিকে এক গ্লাস জল দিতে বলে জামা কাপড় ছাড়তে চলে গেলো ও।
কিন্তু তার এই মনমরা ভাব রানির চোখ এডায নি, জল দিতে এসে জিজ্ঞেস করে সে
_কিরে ভাই মন খারাপ কেন?
_না রে কিছু না,
_আমার জন্য তোর এই অবস্থা, কি হয়েছে রে, অদিতি কিছু বলেছে?
অবাক হয বিতান, রানি কি করে জানালো সে তো কখনও কিছু বলেনি।
তার অবাক ভাব খেয়াল করে রানি বলে,
_একদিন ফোন এসেছিলো, আমি তুলিনি তুই বাথরুমেছিলিস আমি তখন নামটা দেখি, তোর কাছে তো কখনো কোন মেয়ের ফোন আসে না তাই আন্দাজ করলাম তোর বিশেষ বান্ধবী হবে
তুই কবে নিজে থেকে বলবি তার অপেক্ষা করছিলাম।
_ও তাই বল, না তেমন কিছু না, ওর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।
_সেকি কবে, কোথায়, ছেলে কি করে?
_আরে দাঁডা দাঁডা, এতো প্রশ্ন একসাথে করছিস, আমি ওকে কিছুই জিজ্ঞেস করিনি।
_তুই একটা হাঁদা।
_হবে হয়তো
রানি চলে যেতে একটু সুস্থির হলো বিতান। মনে মনে ভাবল আর কি কি অপেক্ষা করে আছে তার জীবনে। এমন আর কোথাও একটু শান্তি পাওয়া যাবে কি? রাতে এমনই চোখে ঘুম আসতে চায়না রাত জেগে বই পড়ার অভ্যাস অনেকদিনের।
সেদিন অদিতির কাছ থেকে চলে আসার পর দু’মাস কেটে গেছে কিন্তু না ওর দিক থেকে আর কোন খবর আসেনি।
বিতান ভেবেছিলো অন্তত একটা নিমন্ত্রণ পত্র পাবে জাস্ট ফর্মালিটি হিসেবে কিন্তু না সেরকম কিছুই হলো না।
বিতান আবার অভস্থ হযে গেলো বাঁধাধরা জীবনে।
সকাল থেকে একটার পর একটা টিউশন আর বাড়ি।
এরকমই একদিন বাড়ি ফিরে সবে একটু রেস্ট নিচ্ছে দেখলো দরজায় অতিথি জয় দা।
তাহলে কি ভুল বুঝতে পেরে রানিকে নিতে এসেছে।
ভদ্রতা করে বলতেই হলো
_এসো জয় দা ভেতরে এসো। রানিকে হাঁক দিয়ে বললো জয় দা এসেছে একটু চা নিয়ে বাইরের ঘরে আয।
মা কে বেশ প্রফুল্ল দেখালো ভাবলো যাক আপদ বিদায় হবে।
রানি চা নিয়ে এলে জয় দা শুধু একটা কথাই বললো
_আমি আবার বিয়ে করে সংসার করতে চাই তাতে তোমার সম্মতি প্রয়োজন।
ও এই ব্যাপার তার মানে জয় দা ঘুরিয়ে ডিভোর্স এর কথা বলতে এসেছে। সে রানির মুখ চেয়ে
আপ্রাণ বোঝাতে চাইলো জয় দা কে।
বাচ্চা না হওয়া টা রানির দোষ নয়।
তার জন্য এতদিনের সম্পর্কে চির ধরানো উচিত নয়। কিন্তু না জয় দা কোনভাবেই রাজি নয়
এ সম্পর্ক টিঁকিয রাখতে আর রানি যাকে বিতান বেশ নরম সরম মেয়ে বলে জানতো
সে বিতান কে অবাক করে দিয়ে ঠান্ডা গলায় বললো
_বেশ, তুমি যা চাও তাই হবে। আমি সই করে দেবো।
এরপর আর জয় দা বসেনি
রাতে খেতে বসে বিতান একটা কথাই বললো
_তুই রাজি হলি কেন? তুই রাজি না হলে কিছু করতে পারতো না।
রানির উত্তর_আমার এমন ভাই আছে তাকে ভরসা করি আমি।
এরপর কোন কথা চলে না।
সত্যি ছোটবেলা থেকে রানি তাকে আগলে রেখেছিলো। তার গায়ে কোন আঁচ লাগতে দেয়নি
অথচ দশ বছরের বড় দিদিকে কেন যে নাম ধরে ডাকা শিখিযেছিলো মা তা জানেনা বিতান।
বড় হবার পর আর নতুন করে অভ্যেস বদলাতে পারেনি বিতান। সেদিন জয় দা চলে যাবার পর
মাকে একটু গম্ভীর দেখলো বিতান।
বুঝতে পারল যে মা রানির এই ডিভোর্স এর ব্যাপারটা ভালো ভাবে নিচ্ছে না হয়তো মনে মনে বিতানকেই দাযি করছে। বিতান যদি ওকে সাথে করে না আনতে তাহলে বোধহয় ছাড়াছাড়ি টা হতো না আর মা হয়তো এটাও ভাবছে চিরকালের মতো রানির দায়িত্ব বিতানের উপর বর্তালো।
রা নিকে যেমন মা পছন্দ করে না বিতানের বেলায় পুরোপুরি উল্টো সেটা কি শুধুই বিতান ছেলে বলে নাকি একটু বেশি বয়সের সন্তান বলে।
ছোটবেলা থেকে দেখে এসেছে সে যে মা ওকে একটু বেশিই প্রশ্রয় দেয়।
বাবা চলে যাওয়াতে সেটা আরো বাড়ে।
মাঝে মাঝে মায়ের এই পক্খপাতে যথেষ্ট বিরক্ত বোধ করে বিতান।
কোন কোন সময় ব্যাপারটা বেশ দৃষ্টি কূটু পর্যায়ে পৌঁছে যায়।
শরীর খারাপের অছিলায একটু তাড়াতাড়ি ই শুতে যায় আজ বিতান। কিন্তু ঘুম আসতে চায় না তার জীবনের এক একটা বাঁকে কি অপেক্ষা করে আছে কে জানে।
রাত কত আন্দাজ করতে পারে না বিতান রানির ঘর থেকে একটা ফোঁপানো কান্নার আওয়াজ আসে।
উঠে আলো জ্বেলে ঘড়ি দেখে বিতান রাত প্রায় আডাইটের কাছাকাছি এখন ও রানি জেগে আছে? তাহলে কি ও মন থেকে জয় দার সাথে ছাড়াছাড়ি টা মানতে পারেনি।
হ্যাঁ, বিতান জানে রানি দূর্বল মনের সাদাসিধে মেয়ে তাই তখন ঐ কাঠিন্য দেখে চমকে ছিলো বিতান।
কিন্তু এখন আর কিছু করার নেই ভাগ্যকে মানতে হবে।
ভাগ্য তো আর জলে থাকা মাছ নয় যে জ্বাল ফেলে ধরবো কৌশলে ফেলবো আর হাতে ভস্ম মেখে পিছলে যেতে দেবো না।
তাই যদি হতো তাহলে বিতান এতদিনে এত ভালো রেজাল্ট নিয়ে বেকার বসে থাকতো না।
আস্তে আস্তে রানির ঘরের দিকে গেলো বিতান দরজায় টোকা দিতেই দরজা খুলে গেল।
বিতান দেখলো দরজা আলগা করে ভেজানো ছিল।
ঘরে ঢুকতেই চোখ মুছে উঠে এলো রানি।
_কিরে ঘুমোস নি?
_তুই ও তো ঘুমোস নি, কি হয়েছে কাঁদছিস কেন?
_আমার কেমন ভাগ্য তাই ভেবে।
_কেন আমাকে ভরসা করিস বললি এই তার নমুনা?
_না রে তোকে ভরসা করি ঠিকই কিন্তু ভাগ্যকে ভরসা করতে পারছি না
বিতান দেখলো খাটের উপর একটা ডায়েরি পরে আছে।
জিজ্ঞেস করলো
_কার ওটা তোর?
_না, বাবার লেখা, এই পুরোন কথা পড়ছিলাম।
এবার বিতান বুঝতে পারে যে জয় দার জন্য নয় আসলে রানি বাবার কথা মনে পরাতে কাঁদছে ও বাবার খুব আদরের ছিলো আজ এই অসহাযতার দিনে বাবাকে মনে পড়ছে।
ও ঘর থেকে চলে আসে।
পরের দিন নিছক কৌতুহলী হযেই বাবার ডায়েরি টা ওর ঘর থেকে নিয়ে আসে বিতান
রাতের বেলা আস্তে আস্তে মেলে ধরে খাতা খানা।
প্রতি পাতায় লুকিয়ে আছে রহস্য।
জানতে পারে বিতান রানির কান্না র রহস্য।
পরতে পরতে থমকে যায় সে এতো কষ্ট রানির জীবনে, জানতে পারে সে রানি মাত্র 5 বছর বয়সে তার মাকে হারায়, তারপর বিব্রত মুখার্জি পুনরায় দার পরিগ্রহ করে ওকে মানুষ করার জন্য।
এতক্ষনে পরিষ্কার হয় বিতানের কাছে কেন মা রানিকে পছন্দ করে না, রানির ভাগ্যের কি আশ্চর্য পরিহাস, এক মেয়ে শিশু কালে মা হারা সে নিজে যখন মা হতে চায় তখন শিশু হারা
কি চমৎকার না, একটি নারী না পেলো মায়ের স্বাদ না পেলো মাতৃত্বের স্বাদ।
আর ভালো লাগলো না পড়তে আর কি কি লুকিয়ে আছে পাতার খাঁজে খাঁজে জানতে মন চাইলো না। শুধু একটাই প্রতিজ্ঞা সে সবটুকু দিয়ে রানিকে ভরিয়ে রাখবে বাবা মা সন্তান সব ঘাটতি ভুলিয়ে রাখার চেষ্টা করবে।
তার নিজেকে দায়ী মনে হলো এসবের জন্য সে না এলে রানি বঞ্চিত হতো না
স্বাভাবিক ভাবেই এক নারী যখন নিজের সন্তান ধারন করে তখন তার উপরেই স্নেহ বেশি যায় আর সে যদি পুত্র হয় তবে তো কথাই নেই।
বাবার খাতা থেকেই জেনেছে ও যে তার জন্মের পরেই মা কেমন রানির থেকে দূরে সরে যায়
বাবা ভেবেছিলো বেশি বয়সের সন্তান বলেই বুঝি এমন কিন্তু তানা আসলে আপন পর ব্যাপারটা মা উপলব্ধি করছিলো। তাই বিতানকেও দশ বছরের দিদিকে দিদি ডাকতে শেখান নি উনি।
মাযের প্রতি সব শ্রদ্ধা টা যেনো এক নিমেষে উবে গেলো বিতানের।
এর পর থেকে রোজ ই ফেরার পথে রানির জন্য আনতে লাগলো চকোলেট, শাড়ি, বই রানি র অপ্রস্তুত ভাব দেখে বলেই ফেললো ছোটবেলা থেকে এসব থেকে বঞ্চিত করেছি আজ তোকে ছোটবেলা ফিরিয়ে দিতে পারবো না কিন্তু তোর জন্য এটুকু আমায় করতে দে।
এভাবেই আবার তাদের সংসার চলছিলো
একদিন বাড়ি ফিরেই আনন্দ এর খবর এলো, রানি এসে একটা চিঠি দিলো তার হাতে প্রথমে ওটা অদিতি র চিঠি ভেবে খুলে দেখলো সত্যিই দারুন খবর, গত পাঁচ ছ মাস আগে একটা ইন্টারভিউ দিযছিলো এরকম তো কতই দেয় ডাক আসে না আবার ভুলেও যায় কিন্তু সত্যি
ডাক এসেছে, সামনের মাস থেকে জযেনিং
উজ্জ্বল মুখে রানিকে আনন্দে জড়িয়ে ধরে বিতান বলে_চাকরি হযে গেছে
এখন 25 হাজার দেবে তুই আমার জীবনে ভীষন লাকী রে
_আমি? আমি আবার কি করলাম, এই চাকরি টা যদি তোর কয়েকমাস আগে হতো তাহলে আজ তোর কাছে অদিতি থাকতো।
ভুলে যাওয়া কথা আবার মনে পরতে মন বিষন্ন হয়ে গেলো মুখে বললো
_বাদ দে, দেখনা তোকে এবাডিতে আনার পরেই আমার চাকরি হলো আজ অনেকরাত হযে গেছে কাল মিষ্টি খাওয়াবো।
রানির কথায় বিতানের আবার পুরোন কথা মনে পড়ে গেল সত্যিই সেই দিনের পর থেকে আর কোন যোগাযোগ নেই
আশা করেছিলো বিতান একটা নিমন্ত্রণ চিঠির বা একটা ফোনে র
আজ এই আনন্দের খবর টা দিতে ইচ্ছে করলেও নিজেকে সংযত করলো বিতান।
যদি বিয়ে হয়ে গিয়ে থাকে তাহলে কোথায় আছে কি ভাবে আছে না ফোন করা উচিত হবে না
তারা দু ভাইবোন মিলেই এই খুশী ভাগ করে নেবে
বিতানের জীবনের ছোট ছোট চমক গুলোর মধ্যে আজকের টা সত্যিই সুখের চমক
কাল আগেই সকালের টিউশন গুলো বাদ যাবে এটা জানাতে হবে রাতের গুলো অফিস ফেরত করে নেবে কারন তার অনেক টাকার দরকার রানিকে সুখে রাখার জন্য।
রানি হয়তো শরীর খারাপের অজুহাত দেখিয়ে ওকে ওতো খাটতে নিষেধ করবে কিন্তু না ও কোন কথাই শুনবে না।
পরের মাসে
প্রথম অফিস গিয়ে ভালোই অভিজ্ঞতা হলো। একটু ভয় ভাব ছিলো কিন্তু কিছুদিন যেতে সে বুঝলো কলিগ রা সব ভালোই বেশ বন্ধু হয়ে গেলো
একটু কাজের চাপ থাকলেও ম্যানেজমেন্ট অতো টা নিষ্ঠুর নয় যেমন সে শুনে এসেছে এতকাল।
অফিস পরিবেশ সে বেশ মানিয়ে নিলো কিছুদিনের মধ্যেই। রানি খুশি মা খুশি শুধু সে নিজে যেনো পুরোপুরি খুশিটা আনতে পারছে না, হয়তো রানির কথাই ঠিক, আর কয়েকমাস আগে হলে সে পুরোপুরি সুখি মানুষ হতো।
বিতান গুনতে থাকে মনে মনে তার জীবনের চমক গুলো কি কি
1_আচমকা ভাবে অদিতর সাথে আলাপ
2_রানির ফিরে আসা আর ডিভোর্স
3_অদিতির চলে যাওয়া
4_রানির শিশুকাল জানা যা অজানা ছিলো
5চাকরি পাওয়া
জানেনা বিতান বিধাতা আর কোন লুকোনো দেওয়াল সামনে রেখেছে কি না।
আপাতত সে বেশ ভালোই আছে।
জাগতিক নিয়মে দিন কেটে যাচ্ছিল, সংসার কিছুটা সচ্ছলতার মুখ দেখলো
বেশ সুস্থ স্বাভাবিক জীবন যাপন।
অনেকদিন পর বাড়িতে আবার আগের মতো ভালো মন্দ খাওয়া হাসি আনন্দ সব ফিরে আসছিলো কিন্তু আবার হঠাৎ ই মোড় ঘুরে গেলো।
অন্য দিনের মতোই টিফিন টাইমে চুটিয়ে আড্ডা হচ্ছিল হঠাৎ ই সেই ভুলে যাওয়া রিং টোন
সকলের মাঝ থেকে উঠে এসে কাঁপা কাঁপা হাতে তুলে নিলো ফোন, মনে আবার অন্য অনুভুতি।
অস্ফুটে বললো_হ্যালো
_একবার দেখা করবে সেই পুরোন রেস্তোরাঁ তে
বুকের ভেতর আশার আলো
_যাবো, কখন বলো
_এই ধরো 7 টা নাগাদ
_ওকে
ফোন কেটে গেলো
তাহলে কি মত বদলেছে অদিতি, বিয়ে ক্যানসেল করে আবার তার কাছেই ফিরে আসবে
এসব নানা কল্পনা জ্বালে কোনমতে অফিস টাইম পার করলো
বেশ হাঁফাতে হাঁফাতেই এসে পৌছলো সেই চেনা রেস্তোরাঁ তে
চেনা টেবিল টাতে বসলো
মুকুল বলে ছেলেটা হাসিমুখে এগিয়ে এলো, জল দিলো
ও জানে অদিতি না এলে বিতান খাবারের অর্ডার দেবে না।
প্রায় মিনিট পনেরো পর অদিতি এলো।
চোখ কালি, মুখে বিবর্ন ছাপ দেখে মনে হচ্ছে কতদিন ঘুমোযনি, খায় নি খুব উদভ্রান্তের মতো
দেখাচ্ছে তাকে।
বিতান একটু হাসার চেষ্টা করলো
চেয়ার টেনে বসেই চায়ের অর্ডার দিলো অদিতি
কোন কুশল খবর না নিয়েই আচমকা ব্যাগ থেকে বের করলো একটা মোটা খাম। ইতিমধ্যে মুকুল চা দিয়ে গেছে।
আচমকা প্রশ্ন করে অদিতি
_আচ্ছা তোমার এক দিদি আছে না?
_হ্যাঁ,
আলগোছে বলে বিতান, মনে মনে ভাবে কি করে রানির খবর জানলো
আবার জিজ্ঞেস করে
_আচ্ছা, তোমার বাবার নাম তো বিব্রত মুখার্জি
_হ্যাঁ,
_ঠিক জানো
_এ আবার কি ধরনের কথা, বাবার নাম জানবো না
_এমনই মজা করলাম
বলেই ব্যাগ গুছিয়ে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ই উঠে পড়লো আর যেতে যেতে বলে গেলো
_বাড়ি গিয়ে খামটা খুলে পড়ে দেখো, আমার মনে হয় না সবটা জানার পর আর তুমি আমার সাথে যোগাযোগ রাখবে
এ আবার কি হেঁয়ালি।
অদিতি কি জানেনা সে যেমন ই হোক যাই হোক বিতান তাকে গ্রহন করতে প্রস্তুত।
অদিতি চলে যাবার পর চা টা শেষ করে দাম মিটিয়ে বেরিয়ে পরে বিতান।
মন ছটফট করে কতক্ষণে বাড়ি ফিরে খামটা খুলে ভিতরের রহস্য উন্মোচন করবে
যদি অদিতির জীবনে গোপন কোন ঘটনা থেকেও থাকে তবুও সে অদিতিকে ঘরে আনবে।
সেদিন সারা রাস্তা ছটফট করে কাটলো যেন পথ অনন্ত, তার আর শেষ নেই
বাড়ি ঢুকেই ঘোষনা করে দিলো সে রাতে খাবে না
খেয়ে এসেছে আর অফিসের দরকারি কিছু কাজ আছে কেউ যেনো তাকে বিরক্ত না করে।
জামা ছেড়ে বেশ ঠান্ডা হয়ে গুছিয়ে বসলো বিতান নতুন রহস্য উন্মোচন করতে।
খামটা খুলে ফেলতেই বেরিয়ে এলো কিছু পুরোন চিঠি আর একটা খাতা।
এক নিঃশ্বাসে চিঠি গুলো পড়তে শুরু করলো সে।
এক মহিলার লেখা তার প্রেমিককে।
কোন নাম নেই শুধু লেখা
তোমাকে
পরপর বেশ কয়েকটি চিঠি পড়ে বিতান যে মর্ম উদ্ধার করলো তা হলো এই
কোন এক মেয়ে ভালোবাসতো একজনকে এরপর কোন কারন বশতঃ সেই মানুষ টি চলে যায়
দূরে কাজের জন্য, এবং এই সুযোগে এক সুপাত্রের সন্ধান পেয়ে মেয়েটির বাবা মা তার বিয়ে দেন
অবশ্য কিছু টা মানবিকতার খাতিরেও তারা মেয়েটিকে বিয়ে দেন
কারন আর কিছু নয় ঐ সদা হাসিখুশি সৎ মানুষটির স্ত্রী মারা যেতে তিনি অসহায় বোধ করেন
প্রথম দিকে পডশী হিসেবে ঐ বাচ্চা মেয়েটির দেখাশোনার দায়িত্ব নিলেও পরে তারা নিজের মেয়েটির বিয়ে দিতে চান এবং মেয়েটি ও তখন তার প্রেমিক টির কাছ থেকে কোন খবরাখবর না পেয়ে রাজি হয়ে যায়।
এরপরের ঘটনা কিছু নয় তারা ভালোভাবেই সংসার করতে থাকে কিন্তু গোল বাঁধে বছর 5 পরে
ঐ প্রাক্তন পুরুষটি ফিরে আসে এবং আবার খোঁজ পায় মেয়েটির
শুরু হয় আবার নতুন উদ্যমে মেলামেশা।
সংসারে অনীহা
ভালোমানুষ স্বামী টি এই পরিবর্তন খেয়াল করে না। এরপর তাদের পুরোন প্রেম আবার বাধাবাঁধন হীন গতি পায়।
অবাধে মেলামেশার ফল স্বরূপ মেয়েটি আবার অন্তঃসত্ত্বা হয়।
এবার শুরু হয নাটক। না এই সন্তান টি নিতে চায় না পুরুষটি আর মেযেটিও চায় না তার প্রেমিকের দান মুছে ফেলতে।
এই নিয়ে আবার শুরু হয় মনোমালিন্য, নতুন মাতৃত্বের স্বাদ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হতে চায় নি সে
শুধু শারীরিক সুখ ভোগের জন্য তাকে এই মানুষটি ব্যবহার করেছে এটা বুঝতে পেরে এই সম্পর্ক থেকে চিরদিনের মতো বেরিয়ে আসে সে আবার সংসারে মন দেয়
তার স্বামী নিতান্ত সহজ মনের লোক, তিনি এই সন্তান কে নিজের বলেই জেনে যান এবং যেহেতু বেশি বয়সের সন্তান তাই স্ত্রী র অধিক যত্ন নিতেও ভোলেন না।
এতটা পরে একটু আর পড়তে ইচ্ছা করে না বিতানের
সে আন্দাজ করতে পারে এ তারই জন্ম বৃত্তান্ত। শুধু বুঝতে পারেনা অদিতি কি ভাবে এত তত্ব সংগ্রহ করলো।
এরপর আর কোন চিঠি নয় অদিতর নিজের লেখা কিছু কথা।
আবার পড়তে শুরু করে বিতান
তার দম বন্ধ হয়ে আসে নিজের প্রতি ঘৃনা হয়।
তবুও সবটা জানতেই হবে।
এরপর অদিতি লিখেছে
এতটা পরে তুমি নিশ্চয়ই জেনে গেছো যে তুমি বিব্রত মুখার্জি র ছেলে নও। আমি কি করে জানলাম তা জানতে ইচ্ছা করছে তোমার।
শোন
প্রথম দিকে তোমার কথা বাপিকে বলতে তার তেমন অমত ছিলো না, কিন্তু যখন তোমাকেই বিয়ে করবো সিদ্ধান্ত নিলাম বাপি তোমার নাম, ঠিকানা জানতে চাইলো আর তারপর থেকেই বেঁকে বসলো
আমি জানতাম তুমি একদিন চাকরি পাবেন, না বেকারত্ব আসল কারন ছিলো না
বাপি কেন প্রথমে রাজি হয়েও পরে মত বদলালো তার কারন অনুসন্ধান করতে শুরু করলাম আমি আর তোমার কাছে যোগাযোগ না রাখার প্রস্তাব রাখলাম আমার কাজের সুবিধার জন্য।
এভাবে গোপনে খোঁজ চালাতে চালাতে যা তথ্য আমার হাতে এলো তা তোমার জনামবৃতান্তের থেকেও মর্মান্তিক।
আমাদের বাড়ি র ছাদে চিলেকোঠার ঘরে একটা বহুদিনের পুরোন অব্যবহৃত সুটকেস ছিলো, নিছক কৌতুহল এর বশে তা খুলে ফেললাম
আজ তোমার হাতে যে চিঠি গুলো তোমাকে বিভ্রান্ত করে তুলেছে সেদিন ঐ সুটকেস থেকেই ওগুলো পেয়েছিলাম আর যা পেলাম তা নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত তাই সেগুলো তোমাকে দিলাম না।
শুধু তোমাকে বলে রাখি শোন
তোমার আমার দেখা হওয়া টা বোধহয় ঈশ্বর নির্দেশিত নয়তো এই গোপন কান্ডের কথা অজানা থেকে যেতো তবে একটা কথা সত্য জেনো যে সত্যি কখনো ও অপ্রকাশিত থাকে না।
হ্যাঁ, যেটা বলছিলাম
আমি তোমার সব খবর রাখতাম
তোমার চাকরি পাওয়ার খবর ও পেযেছি কিন্তু না একটা অভিনন্দন জানিয়ে ও ফোন করিনি কোন মুখে করবো বলো
আমি যে জেনে গেছিলাম
অনিমেষ রায়, যাকে এতদিন শ্রদ্ধা করে এসেছি আজ তার জন্য ই আমার জীবন বিপন্ন।
হ্যাঁ, তুমি হয়তো আন্দাজ করতে পারছো
আমার বাবা ই তোমার জন্মদাতা
এই চরম সত্য টা মানতে কষ্ট হলেও আমরা নিযতির হাতের পুতুল
আর নয়
এই চিঠি পড়ার পর যখন তুমি সব জানবে তখন আর বোধহয় তোমার আমার দেখা হওয়ার প্রয়োজন হবে না।
আঃ সুখনিদ্রা।
চলি।
আমাকে ভুল বুঝো না।
অদিতি।
সবটুকু শেষ করে স্থানুর মতো বসে রইল বিতান।
শেষ ইংগিত টা ধরতে কোন অসুবিধা হলো না।
কিন্তু বিতান কে বাঁচতে হবে রানির জন্য।
জানলার দিকে তাকিয়ে দেখলো ভোরের আলো আলগা ছড়িয়ে পরেছে কাগজ গুলোর উপর।
বিতান ভাবে আবার এক নতুন ভোর
আবার নতুন কোন চমক।।।। ।।

