Tuesday, 4 October 2016

সমব্যথী

 টুটুল।

পাখিটা রোজ খড়কুটো মুখে দিয়ে উড়ে এসে বসে সামনের ঐ কাঠচাঁপা গাছটাতে।
প্রতিদিন একটা করে খড়কুটো নিয়ে জমা করে সে।
এ দৃশ্য বসে বসে রোজ দেখে তিথি। ******
ঠিক ঐ গাছটার তিনটে ডাল যেখানে মিলে মিশে একটা কোন তৈরী করেছে ঐ জায়গায় জড়ো করে খড়কুটো।
এই ভাবে একই দৃশ্য রোজ দেখতে দেখতে তিথি একদিন আবিষ্কার করে
ঐ স্থান টাতে বেশ একটা ঝোপের আকার নিয়েছে।
তারমানে পাখিটা ওখানে বাসা তৈরি করেছে।
******************অদ্ভুত একটা আনন্দ অনুভব করে তিথি।
এমনই ওর রোজ এখানে বসে ঐ পাখির গতিবিধি নজর রাখা একটা অভ্যাস হয়ে গেছে।
কয়েকদিন পর হঠাৎ তিথি দেখে পাখি টা মুখে করে কিছু এনেছে
কিন্তু তা খড়কুটো নয়।
গাছের উপর ঐ ঝোপের পাশে বসতেই ঐ ঝোপ থেকে কিচকিচ
মৃদু শব্দের সাথে বাইরে বেরিয়ে এলো ছোট্ট ছোট্ট লাল লাল
চারটি কচি কচি হা।
আর মা পাখি টা টুক টুক করে ওদের মুখে পুরে দিচ্ছে ঠোঁটে করে বযে
আনা খাদ্য কনা।
সেই থেকে ওদের ছানা গুলোকে দেখা যেনো একটা নেশা হযে গেলো
তিথির।
কিন্তু বিকেলের পর যেই সন্ধ্যা নামে ঝুপ ওমনি পাখিদের কলকাকলি
এক্কেবারে চুপ।
*********************
সেই শুরু হয় তিথির অপেক্ষা পরের দিন ভোরের জন্য।
সকাল হলেই ঐ বারান্দায় বসে কাগজ পরতে পরতে ও লক্ষ্য করে ওদের।
বেশ ভালো লাগে মনটা।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকে রাত আর রাতের পরে সকাল অবধি সময় যেনো আর কাটেই না।
আচ্ছা ও যদি ঐ পাখি গুলো পুষতে চায় তাহলে মা কি খুব রাগ করবে?
নাকি এসব পাখি উড়ে উড়ে বেডাতেই ভালো বাসে পোষ মানেনা।
এভাবে কাটে আরো কতদিন
তারপর তিথি দেখে মা পাখিটা আর ওদের মুখের ফাঁকে খাবার দেয় না
একটা নির্দিষ্ট স্থানে রেখে দেয়।
আর ঐ বাচ্চা গুলো টুক করে বাসা থেকে বার হযে ঐ খাবার নিজেরাই খায়।
এরপর একদিন তিথি দেখে পাখি র বাচ্চা গুলো বেশ কিচকিচ করতে করতে
কাছাকাছি ডালে বেশ উড়ে উড়ে বসছে।
তিথির মনে আসে ওর মায়ের কথা।
ঐ মা পাখিটার মতো তার মা ও তো প্রাণপাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
অফিসের কাজের পরেও আরো দুটো টিউশন করে বাড়ি ফিরে
আবার এই সংসারের কাজ।
শুধু ওর খাদ্য, ভালো থাকার ব্যবস্থা করার জন্য।
এভাবে একদিন তিথি আবিষ্কার করলো মা পাখিটা আর খাবার আনে না
ছোট্ট পাখির ছানা রা বেশ এ ডাল ও ডাল ঘুরে, এ বারান্দা ও বাগান
ঘুরে নিজেরাই বেশ খুঁটে খেতে শিখে গেছে।
তিথির মনটা হঠাৎ বিষন্ন হয়ে গেলো, সে বুঝলো মা পাখিটার এবার বিশ্রাম।
কিন্তু সে? সে তো কোনদিন পারবে না তার মাকে বিশ্রাম দিতে।
নিজের অজান্তেই তার চোখ দুটো ভিজে উঠলো।
আস্তে আস্তে হুইল চেয়ার টা ঘুরিয়ে ঘরের দিকে ফিরে চললো সে
বাইরে তখন সন্ধ্যা নেমেছে ঝুপ।
পাখিদের কলকাকলি এক্কেবারে চুপ

No comments:

Post a Comment