Thursday, 9 November 2017

অতীত

টু টু ল

বেহিসেবি সুর তাল
গেয়েছি যে ভুলভাল
তবু আজো মনে সেই ছন্দ।
চৌ খুপী  দাগ কেটে
এক পায়ে হেঁটে হেঁটে
এক্কা দোক্কা ভালো মন্দ।
দড়িলাফ লাফালাফি
তুই ভুলে গেলি নাকি?
একশো, দুশো বাজি জিততাম।
দুই বেনী দুই পাশে
শাড়ি ধরে দু হাতে
ব্যাগ নিয়ে ইস্কুলে ছুটতাম।
গরমের ছুটিতে
শুধু হুটপুটিতে
সারা বাড়ি কাঁপিয়ে যে রাখতাম।
বকুনির ভয়েতে
পড়ার বই তে
গল্পের বই রেখে পড়তাম।
ঘুঘনী, হজমি যত
লুকিয়ে কিনতে হতো
নিষেধ র সব বেড়া ডিঙয়ে।
সেই সব দিনক্ষণ
মনে আসে অকারন
সেই দিনে তাই যাই পালিয়ে।

Sunday, 22 October 2017

একটি অভিজ্ঞতার গল্প

এখনো পূজোর মরসুম চলছে।আর কদিন বাদেই জগদ্ধাত্রী পূজো হয়ে আবার সব একঘেঁয়ে জীবনের ধারাবাহিকতায় ঢুকে পড়বে।
আজ যে ঘটনাটা বলতে যাচ্ছি অনেকদিন ধরেই বলবো বলবো করে আর শারীরিক কারনে লেখা হয়ে উঠেনি ।
এখন যেমন চারিদিকে একটা আতংকের মধ্যে বাস করছি আমরা সব সময় মনে হয় সর্বত্র যেনো বাড়ীর প্রতিটি আনাচে কানাচেই বোধহয় ঘাপটি মেরে লুকিয়ে রয়েছে নারীধর্ষন কারী।
সুযোগ পেলেই লাফিয়ে পড়বে আর নিমেষে ছিন্নভিন্ন করে দেবে সব।
আজ যে ঘটনা বলবো তা শুনে এই বিশ্বাস আসবে মনে যে এখনো কিছু ভালো লোক আছে এই বাসযোগ্য বাহভুমিতে।
সাল টা মনে নেই তবে ঘটনাটা পূজোর দিনের তাই এই পূজো পূজো ভাব চলতে চলতে মনে হলো লেখাটা দেওয়া দরকার।
আমার মেয়ে তখন এই বছর পনেরো ষোল বয়স।
ওর এক বন্ধু থাকতো বেলঘরিয়ায়।এখন অবশ্য সে দিল্লীর বাসিন্দা।
যাই হোক ,তা ওর মা আমায় ফোন করে বললো যে আমি যেনো অবশ্য ই আমার মেয়েকে নিয়ে ওনার বাড়ি যাই ঐ পূজোর অষ্টমীর দিন।
তা আমি ও মত দিলুম যাবো বলে রাজীও হলুম।
কারন আগে থেকেই ওনাদের ফ্যামিলীর সাথে একটা সখ্যতা হয়ে গেছিলো।
আর আমরা তখন থাকতাম শ্যামনগরে।কাজেই কোন বাধা নেই ওদের বাড়ী যাবার কারন টা আর কিছুই নয় উনি যেহেতু ওনার অসুস্থ শাশুড়ীকে ফেলে বেড়োতে পারবেন না তাই আমি গেলে আমার সাথে ভরসা করে ওর মেয়ে কে একটু ঠাকুর দেখতে ছাড়তে পারবেন নয়তো মেয়ে টার বেড়োন হবে না।
কাজেই আমার রাজী না হবার মতো কিছু ছিলো না।
তাই অষ্টমীর দিন যথাসময়ে আমার স্বামীকে বলে আমি ও আমার মেয়ে রওনা হলাম বেলঘরিয়ার উদ্দেশ্যে।
যথারীতি পৌঁছেও গেলাম ।
সহেলী র মা অনেক কিছু রান্নাবান্না করেছিলেন আর উনি বরাবরই খুব আতিথি বৎসল তাই আয়োজনের কোন ত্রুটি ছিলো না ‌
আমরা দুপুরে খাওয়ার পাট চুকিয়ে একটু বিকেল বিকেল বেড়িয়ে পড়লাম ঠাকুর দেখার উদ্দেশ্যে।
বেশীদূর নয় কথা হলো ঐ দমদম পর্যন্ত দেখে আবার ওকে বেলঘরিয়ার দিকের ট্রেনে চড়িয়ে দেবো তারপর ও একলাই ফিরবে কারন ওদের বাড়ি টা একদম স্টেশন সংলগ্ন।
সেই মতো সব স্থির করার পর সহেলি দমদম স্টেশনে এসেই একটা ফোনের বুথ থেকে ওর বাবাকে ফোন করলো আর বললো কাকিমা আপনারা এখান থেকেই ট্রেনে চড়ে পড়ুন আর বেলঘরিয়ায় যেতে হবে না তাই আমাদের কাজ কমে গেলো কিছু ক্ষন পরেই ওর বাবা এসে স্কুটারে করে ওকে নিয়ে গেলো আর আমরাও সামনেই এক নং প্ল্যাটফর্মে যে গাড়ী টা ঢুকলো তাতে চড়ে পড়লাম।
দমদম থেকে শ্যামনগরের দূরত্ব মাত্র ত্রিশ মিনিট ট্রেনে আর মহিলা কামরা বেশ খালিই ছিলো কারন অনেক রাত ও হয়ে গেছিলো।
এইভাবে বেশ কিছু সময় পেরিয়ে যেতে একটা স্টেশনে ট্রেন থামতে আমি মেয়ে কে বললাম দেখতো ব্যারাকপুর আসলো কি না ?
আমার এই কথা শুনে এক মহিলা বলে উঠলেন ,আপনি কোথায় যাবেন?এই গাড়ি তো ব্যারাকপুর যাবে না ,এটা ডানকুনি লোকাল।
আমার তো তখন মাথায় হাত সত্যিই তাড়াহুড়ো তে কোন গাড়ি না দেখেই চড়ে পড়েছি এক নং প্ল্যাটফর্ম বলে নিশ্চিতরূপে ভেবে নিয়েছি যে আমাদের ওদিক কার ই কোন গাড়ি হবে কিন্তু স্টেশন টা যে দমদম এখান থেকে অনেক গাড়িই যায় তা মাথায় ছিলো না।
ওদিকে ততক্ষনে অনেকে বুদ্ধি দিতে শুরু করেছে ডানকুনি অবধি চলুন এই ট্রেন টাই আবার ফিরবে তখন দমদমে নেমে যাবেন তারপর নিজের গন্ত্যবের গাড়ি ধরবেন।
এমনিতেই রাত বাড়ছে তাই এই কথা খুব যুক্তিসংগত বলে মনে হলো না এই সময় এক মহিলা বললেন তিনি দু এক স্টেশন পরেই নামবেন সেখান থেকে ডানলপের অটো পাওয়া যাবে তারপর ডানলোপ থেকে বেলঘরিয়ার অটো ।
তাই তার কথায় রাজি হলাম।
সংগে অল্প বয়সী মেয়ে তায় আবার পুজোর সাজ আর আমার বয়স টাও তখন কম তাই অচেনা জায়গায় একটু ভয় ভয় করছিলো।
অগত্যা ওনার সাথে দু স্টেশন বাদে নামার সিদ্ধান্ত নিলাম ।
এই বার শুরু হলো আমার গল্প।
ভদ্রমহিলা স্টেশন আসতেই আমাদের নিয়ে হুড়মুড় করে নেমে পড়লেন আর মেন প্ল্যাটফর্ম এ না গিয়ে পাশের একটা শুরু আলপথ যা নীচের দিকে নেমে গেছে ,পুরো অন্ধকার সেখান থেকে তড়তড়িয়ে নামতে নামতে বললেন যে ওনার বাড়ি নাকি এই পথেই কাছে হয়।
তা আমি তখন বললাম কিন্তু আমি তো এ ভাবে চিনবো না ,
আমি কি করে যাবো ।এই কথা শেষ হতে না হতেই একটা লোক কে দেখলাম উল্টো দিক থেকে স্টেশনে র উপরে উঠে আসছে ,ওনাকে দেখেই এই মহিলা বলে উঠলেন এনারা ভুল ট্রেনে চড়ে পড়েছেন এদের একটু ডানলোপে র অটো ধরিয়ে দিন।
ব্যাস এই কথা বলেই আমার মতামতের তোয়াক্কা না করেই আমাদের ঐ অচেনা লোকটা র হাতে সঁপে দিয়ে উনি তড়বড়িয়ে উধাও হয়ে গেলেন।
আমার তো তখন রীতিমতো ভয়এ বুক ঢিপঢিপ করতে শুরু করেছে ঘড়িতে দেখছি রাত প্রায় এগারো টা বেজে গেছে।
যাই হোক ঠাকুরের কাছে কোনো কোনো সময় আত্মসমর্পণ করতে হয়।
আমিও তাই করতে করলাম।
লোকটি সামনে সামনে চলেছে বিড়ি ফুঁকতে ফুঁকতে আর আশেপাশে ঝোপঝাড় জংগল।
মাঝখানে একটা শুরু রাস্তা এগলি ও গলি ঘুরে যাচ্ছিই তো যাচ্ছি সামনে লোকটি পেছনে আমি ও আমার মেয়ে।
লোকটা র মুখের দিকে ভালো করে দেখিও নি ভয় তে তাই আজো ও শুধু ঐ লুংগি পড়া গলায় একটা আধময়লা গামছা ঝোলানো আর বিড়ি ফোঁকা দৃশ্য টাই মনে পড়ে।
যাই হোক আমার কপাল ই ভালো হোক বা ঠাকুরের কৃপা হোক সব গলিঘুঁজি পেড়িয়ে লোকটা আমাদের নিয়ে এলো বড় রাস্তায়।
তবুও এখানে তেমন পুজো পুজো মনে হচ্ছে না ,যে গলি দিয়ে বেড়োলাম তার উল্টোদিকে বড় রাস্তার একধারে দু একটা অটো দাঁড়িয়ে আছে।
লোকটি একটা অটোওয়ালাকে বললো আমাদের ডানলোপ অবধি পৌঁছে দিতে তাক বুঝে অটোওয়ালা অনেক টাকা চাইলো তখন লোকটি বললো ওনারা বিপদে পড়ে এসেছেন অতো টাকা সংগে করে ঘুরছেন নাকি?
এই শুনে অটোওয়ালা একটু মিনমিনে হয়ে চল্লিশ টাকা চাইলো এবং এই শুধু নয় লোকটি বলে দিলো যে আমাদের যেনো ডানলপ থেকে বেলঘরিয়ার অটো স্ট্যান্ড দেখিয়ে দেওয়া হয়।
তারপর আর কি ঐ অটোওয়ালা যথারীতি আমাদের ডানলপে পৌঁছে হাত দিয়ে দূরের বাঁদিকের রাস্তা দেখিয়ে বলে দিলো যে ওখান থেকেই বেলঘরিয়ার অটো পাওয়া যাবে।আমরা সেইমতো বেলঘরিয়ার অটো স্ট্যান্ডে এসে দেখলাম বিশাল লাইন।
তারপর আর কি ডানলপ থেকে বেলঘরিয়ায় পৌঁছলাম এবং সেখানে দেখলাম বেশ ভীড় ,এবার বেশ বোঝা যাচ্ছে যে পুজোর অষ্টমীর তিথি কলকাতা য় ঠাকুর দেখে সবাই ফেরার তাগিদ।
এরপর যা হলো সেটা মামুলী ঘটনা।
একটি লোক এতরাতে একটা অল্পবয়সী মেয়ে সহ আমায় একা পেয়ে ভাব জমাতে এসেছিলো,টিকিট কাটবে কি না জানতে ।
আমি বেশ গম্ভীর ভাবেই বললাম যে আমাদের রিটার্ন টিকিট কাটা।
আমার গলার স্বরে কিছু একটা ছিলো আর এমনিতেই আমি একটু গম্ভীর প্রকৃতির তা যারা আমার ছবি দেখেন তারা জানেন যে সব সময় একটা গোমড়ামুখের ছবিই আপলোড হয় কাজেই যে কারনেই হোক লোকটা চলে গেলো আর আমরা বেলঘরিয়ার থেকে রানাঘাট লোকাল ধরে বেশ নির্বিঘ্নে ই শ্যামনগরে পৌঁছে গেলাম ।
দেখলাম আমার কর্তা টি ঘর বার করছে ।পাড়ায় তখনোও মাইকে গান চলছে ,ঘড়িতে তখন বারোটা বেজে গেছে একটু জিরিয়ে সব ঘটনা টা বললাম আমার মেয়ের বাবা কে ।
তাই ভাবি তখন মোবাইল ফোন ছিলো না বলে কত অসুবিধার মধ্যে পড়তে হতো ।
আর এও ভাবি সব মানুষ ই রেপিস্ট নয়,সবাই নারীলোলুপ নয় ,সবাই সুযোগসন্ধানী নয়।
আজ এখানেই থামছি এই রকম আর একটি অভিজ্ঞতার কথা আছে আমার ঝুলিতে তা এর থেকেও ভয়াবহ পরিস্থিতির কথা।বলবো অন্য আরেকদিন।

Thursday, 19 October 2017

কি নাম দেবো

কি নাম দেবো

টুটুল চ্যাটার্জি@শিউলি
এসব কিন্তু মিথ্যে ছবি সত্যি ছবি নয়
দু হাতে তার অনাসৃষ্টি দুচোখ জুড়ে ভয়।
কুঁজোর ভেতর ঠাণ্ডা জল আর বাইরেতে উত্তাপ
মনের ভেতর শীতলপাটি, চোখ দুটো নিষ্পাপ।
এসব শুধু ই গল্পগাঁথা, সত্যি কিছুই নয়
চোখেতে তার অনাসৃষ্টি, চোখে তে নেই ভয়।
ক্লান্ত মেঝে ঘুমোয় যখন,নিশ্চিত দুপুর
মনের ভেতর বেজে উঠে একঘেয়ে কোন সুর।
দু হাতে তার শক্তি এখন চোখেতে উত্তাপ
শরীর জুড়ে বয়ে বেড়ায় বেয়ারা এক পাপ।
সেই পাপেতে বলি হবে তার সেই শৈশব
পুড়বে মন আর চোখ পুড়বে ভীষন অভিশাপ।
শৈশব তার হাতছানি দেয় এপারে এপ্রান্তে
আজকে কি কেউ চাইবে সে সব স্মৃতিকথা জানতে?
নীল দোপাটি গন্ধ ছিলো শ্বেত শিউলি মন
মনের ভেতর জ্বলতো প্রদীপ আনন্দ নিকেতন।
যা যাবার তা হারিয়ে গেছে হলুদ বনের কোনে
আর যেটুকু পাওনা হলো রাখছে সযতনে।

শিউলি

Thursday, 20 April 2017

কবিতা নয় বোধ

@টুটুল

পুবের সূর্য উদয় থেকে পশ্চিমে চাঁদের দেখা পর্যন্ত
কর্মবিরতি নেই কোন
তারই মাঝে মন উড়ে যায়।
তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনার ব‍্যার্থ প্রচেষ্টা চালাই না।
মন চেয়ে দেখে অনেক দূরের কোন এক বৃদ্ধ দর্জিকে।
চোখে চশমা ,কুঁচকোন চামড়ায় ,কম্পিত হাতে
সেলাই মেশিন চালায় একটানা।
ইব্রাহিম চাচা, দর্জি, বিখ‍্যাত নামী দোকানের কর্মচারী মাত্র।
যুবক বয়স থেকেই ব্লাউজ বানানোতে সুদক্ষ।
পঁচিশের সুদর্শন যুবক তখন ,আমি পনেরো কি ষোল।
তখনও দেখেছি তাকে ,সুনিপুন মাপে ফিতে হাতে।
চাচার ফিতের মাপে আর আঙ্গুলের ফাঁকে যোজন দূরত্ব
সেমিকোলন থাকে।
অথচ সুনিপুন মাপে ব্লাউজ তৈরী করে সে।
লজ্জায় অবনত হতে হয় না মেয়েদের
কুঁকড়ে আসেনা শরীর।
তার মাপের ফিতেই আর আঙুলের ফাঁকে নির্দ্ধিধায়
ঋজুভঙ্গিতে থাকে নারীর সম্মান।
একচুল ও মাপে ভুল হয়না ,নারীর শ্লীলতাও থাকে অক্ষত।
মুসলমান ঐ চাচা ,আজ ও বাঁচিয়ে চলেছে
মাপের ফিতের সাথে বাধ‍্য আঙুলের রেখা।
আর ঐ কালীকাটরার কেষ্টকাকা
অন্ধকার গলির স‍্যঁতস‍্যাঁতে দোকানে টিমটিমে আলোয়
বিপনন সাজিয়ে বসে রোজ।
অন্তর্বাসের দোকানে কুলুঙ্গীতে লক্ষী গনেশের ছবি।
সেই গলিতেও নির্দ্ধিধায় যায় মেয়েরা।
নির্বিকার মুখে অন্তর্বাসের প‍্যাকেট নামিয়ে আনে
বলে চলে ,কত সাইজ,কি রঙ কোন কোম্পানি?
না , সেখানেও শ্লীলতা হানি হয়নি কখোনো।
সে দোকানে বৃদ্ধ কেষ্টকাকা এখনো ও বিক্রি করে চলেছে
সাদা কালো লাল গেরুয়া বিভিন্ন রঙের অন্তর্বাস।
অন্ধকার ছায়া ছায়া গলির টিমটিমে আলোর দোকান
হিন্দু ঐ কাকা যুবক বয়স থেকে বৃদ্ধ হলেন
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে নিয়েছেন নারী র সম্মান বোধ।
ফিচেল হাসি, ফিচকে কথা কানে আসেনি ক্রেতাদের।
মহিলা ক্রেতা আর কাকার আঙুলের ব‍্যাবধানে বিনিময় হয়েছে
ন‍্যায‍্য মূল্য আর অন্তর্বাসের প‍্যাকেট।
এরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান ,কেউ বৌদ্ধ কেউ জৈন
এদের শতেক দায়,কর্মবিচ‍্যুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির সময় নেই।
আজও তাই ইব্রাহিম চাচার মেশিন চলে
খটখট খটখট
আজও কেষ্টকাকা র দোকানে হুমড়ি খায় মেয়ের দল।
এদের পেটে আছে অসংখ্য ভাঁজ
খিদের ভাঁজ, সম্মানের ভাঁজ, রোজগারের ভাঁজ।
এদের হয়তো শিক্ষাগত মান, পরিবেশ , কিচ্ছু নেই।
এদের মাথার ভেতর আছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
নারী নিয়ে কারবারি হয়েও তাইমাথার বোধে ভরে নেয়
যোজন দূরত্বের সেমিকোলন।
বাঁচিয়ে চলে নারীর সম্মান,বাধ‍্য করেছে নিজেদের আঙুল
এরাই আমার দেশবাসী, এরাই ভারতবর্ষ।।।

Tuesday, 18 April 2017

কবিতা নয় বোধ

@টুটুল

পুবের সূর্য উদয় থেকে পশ্চিমে চাঁদের দেখা পর্যন্ত
কর্মবিরতি নেই কোন
তারই মাঝে মন উড়ে যায়।
তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনার ব‍্যার্থ প্রচেষ্টা চালাই না।
মন চেয়ে দেখে অনেক দূরের কোন এক বৃদ্ধ দর্জিকে।
চোখে চশমা ,কুঁচকোন চামড়ায় ,কম্পিত হাতে
সেলাই মেশিন চালায় একটানা।
ইব্রাহিম চাচা, দর্জি, বিখ‍্যাত নামী দোকানের কর্মচারী মাত্র।
যুবক বয়স থেকেই ব্লাউজ বানানোতে সুদক্ষ।
পঁচিশের সুদর্শন যুবক তখন ,আমি পনেরো কি ষোল।
তখনও দেখেছি তাকে ,সুনিপুন মাপে ফিতে হাতে।
চাচার ফিতের মাপে আর আঙ্গুলের ফাঁকে যোজন দূরত্ব
সেমিকোলন থাকে।
অথচ সুনিপুন মাপে ব্লাউজ তৈরী করে সে।
লজ্জায় অবনত হতে হয় না মেয়েদের
কুঁকড়ে আসেনা শরীর।
তার মাপের ফিতেই আর আঙুলের ফাঁকে নির্দ্ধিধায়
ঋজুভঙ্গিতে থাকে নারীর সম্মান।
একচুল ও মাপে ভুল হয়না ,নারীর শ্লীলতাও থাকে অক্ষত।
মুসলমান ঐ চাচা ,আজ ও বাঁচিয়ে চলেছে
মাপের ফিতের সাথে বাধ‍্য আঙুলের রেখা।
আর ঐ কালীকাটরার কেষ্টকাকা
অন্ধকার গলির স‍্যঁতস‍্যাঁতে দোকানে টিমটিমে আলোয়
বিপনন সাজিয়ে বসে রোজ।
অন্তর্বাসের দোকানে কুলুঙ্গীতে লক্ষী গনেশের ছবি।
সেই গলিতেও নির্দ্ধিধায় যায় মেয়েরা।
নির্বিকার মুখে অন্তর্বাসের প‍্যাকেট নামিয়ে আনে
বলে চলে ,কত সাইজ,কি রঙ কোন কোম্পানি?
না , সেখানেও শ্লীলতা হানি হয়নি কখোনো।
সে দোকানে বৃদ্ধ কেষ্টকাকা এখনো ও বিক্রি করে চলেছে
সাদা কালো লাল গেরুয়া বিভিন্ন রঙের অন্তর্বাস।
অন্ধকার ছায়া ছায়া গলির টিমটিমে আলোর দোকান
হিন্দু ঐ কাকা যুবক বয়স থেকে বৃদ্ধ হলেন
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে নিয়েছেন নারী র সম্মান বোধ।
ফিচেল হাসি, ফিচকে কথা কানে আসেনি ক্রেতাদের।
মহিলা ক্রেতা আর কাকার আঙুলের ব‍্যাবধানে বিনিময় হয়েছে
ন‍্যায‍্য মূল্য আর অন্তর্বাসের প‍্যাকেট।
এরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান ,কেউ বৌদ্ধ কেউ জৈন
এদের শতেক দায়,কর্মবিচ‍্যুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির সময় নেই।
আজও তাই ইব্রাহিম চাচার মেশিন চলে
খটখট খটখট
আজও কেষ্টকাকা র দোকানে হুমড়ি খায় মেয়ের দল।
এদের পেটে আছে অসংখ্য ভাঁজ
খিদের ভাঁজ, সম্মানের ভাঁজ, রোজগারের ভাঁজ।
এদের হয়তো শিক্ষাগত মান, পরিবেশ , কিচ্ছু নেই।
এদের মাথার ভেতর আছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
নারী নিয়ে কারবারি হয়েও তাইমাথার বোধে ভরে নেয়
যোজন দূরত্বের সেমিকোলন।
বাঁচিয়ে চলে নারীর সম্মান,বাধ‍্য করেছে নিজেদের আঙুল
এরাই আমার দেশবাসী, এরাই ভারতবর্ষ।।।

কবিতা নয় বোধ

@টুটুল

পুবের সূর্য উদয় থেকে পশ্চিমে চাঁদের দেখা পর্যন্ত
কর্মবিরতি নেই কোন
তারই মাঝে মন উড়ে যায়।
তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনার ব‍্যার্থ প্রচেষ্টা চালাই না।
মন চেয়ে দেখে অনেক দূরের কোন এক বৃদ্ধ দর্জিকে।
চোখে চশমা ,কুঁচকোন চামড়ায় ,কম্পিত হাতে
সেলাই মেশিন চালায় একটানা।
ইব্রাহিম চাচা, দর্জি, বিখ‍্যাত নামী দোকানের কর্মচারী মাত্র।
যুবক বয়স থেকেই ব্লাউজ বানানোতে সুদক্ষ।
পঁচিশের সুদর্শন যুবক তখন ,আমি পনেরো কি ষোল।
তখনও দেখেছি তাকে ,সুনিপুন মাপে ফিতে হাতে।
চাচার ফিতের মাপে আর আঙ্গুলের ফাঁকে যোজন দূরত্ব
সেমিকোলন থাকে।
অথচ সুনিপুন মাপে ব্লাউজ তৈরী করে সে।
লজ্জায় অবনত হতে হয় না মেয়েদের
কুঁকড়ে আসেনা শরীর।
তার মাপের ফিতেই আর আঙুলের ফাঁকে নির্দ্ধিধায়
ঋজুভঙ্গিতে থাকে নারীর সম্মান।
একচুল ও মাপে ভুল হয়না ,নারীর শ্লীলতাও থাকে অক্ষত।
মুসলমান ঐ চাচা ,আজ ও বাঁচিয়ে চলেছে
মাপের ফিতের সাথে বাধ‍্য আঙুলের রেখা।
আর ঐ কালীকাটরার কেষ্টকাকা
অন্ধকার গলির স‍্যঁতস‍্যাঁতে দোকানে টিমটিমে আলোয়
বিপনন সাজিয়ে বসে রোজ।
অন্তর্বাসের দোকানে কুলুঙ্গীতে লক্ষী গনেশের ছবি।
সেই গলিতেও নির্দ্ধিধায় যায় মেয়েরা।
নির্বিকার মুখে অন্তর্বাসের প‍্যাকেট নামিয়ে আনে
বলে চলে ,কত সাইজ,কি রঙ কোন কোম্পানি?
না , সেখানেও শ্লীলতা হানি হয়নি কখোনো।
সে দোকানে বৃদ্ধ কেষ্টকাকা এখনো ও বিক্রি করে চলেছে
সাদা কালো লাল গেরুয়া বিভিন্ন রঙের অন্তর্বাস।
অন্ধকার ছায়া ছায়া গলির টিমটিমে আলোর দোকান
হিন্দু ঐ কাকা যুবক বয়স থেকে বৃদ্ধ হলেন
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে নিয়েছেন নারী র সম্মান বোধ।
ফিচেল হাসি, ফিচকে কথা কানে আসেনি ক্রেতাদের।
মহিলা ক্রেতা আর কাকার আঙুলের ব‍্যাবধানে বিনিময় হয়েছে
ন‍্যায‍্য মূল্য আর অন্তর্বাসের প‍্যাকেট।
এরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান ,কেউ বৌদ্ধ কেউ জৈন
এদের শতেক দায়,কর্মবিচ‍্যুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির সময় নেই।
আজও তাই ইব্রাহিম চাচার মেশিন চলে
খটখট খটখট
আজও কেষ্টকাকা র দোকানে হুমড়ি খায় মেয়ের দল।
এদের পেটে আছে অসংখ্য ভাঁজ
খিদের ভাঁজ, সম্মানের ভাঁজ, রোজগারের ভাঁজ।
এদের হয়তো শিক্ষাগত মান, পরিবেশ , কিচ্ছু নেই।
এদের মাথার ভেতর আছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
নারী নিয়ে কারবারি হয়েও তাইমাথার বোধে ভরে নেয়
যোজন দূরত্বের সেমিকোলন।
বাঁচিয়ে চলে নারীর সম্মান,বাধ‍্য করেছে নিজেদের আঙুল
এরাই আমার দেশবাসী, এরাই ভারতবর্ষ।।।

কবিতা নয় বোধ

@টুটুল

পুবের সূর্য উদয় থেকে পশ্চিমে চাঁদের দেখা পর্যন্ত
কর্মবিরতি নেই কোন
তারই মাঝে মন উড়ে যায়।
তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনার ব‍্যার্থ প্রচেষ্টা চালাই না।
মন চেয়ে দেখে অনেক দূরের কোন এক বৃদ্ধ দর্জিকে।
চোখে চশমা ,কুঁচকোন চামড়ায় ,কম্পিত হাতে
সেলাই মেশিন চালায় একটানা।
ইব্রাহিম চাচা, দর্জি, বিখ‍্যাত নামী দোকানের কর্মচারী মাত্র।
যুবক বয়স থেকেই ব্লাউজ বানানোতে সুদক্ষ।
পঁচিশের সুদর্শন যুবক তখন ,আমি পনেরো কি ষোল।
তখনও দেখেছি তাকে ,সুনিপুন মাপে ফিতে হাতে।
চাচার ফিতের মাপে আর আঙ্গুলের ফাঁকে যোজন দূরত্ব
সেমিকোলন থাকে।
অথচ সুনিপুন মাপে ব্লাউজ তৈরী করে সে।
লজ্জায় অবনত হতে হয় না মেয়েদের
কুঁকড়ে আসেনা শরীর।
তার মাপের ফিতেই আর আঙুলের ফাঁকে নির্দ্ধিধায়
ঋজুভঙ্গিতে থাকে নারীর সম্মান।
একচুল ও মাপে ভুল হয়না ,নারীর শ্লীলতাও থাকে অক্ষত।
মুসলমান ঐ চাচা ,আজ ও বাঁচিয়ে চলেছে
মাপের ফিতের সাথে বাধ‍্য আঙুলের রেখা।
আর ঐ কালীকাটরার কেষ্টকাকা
অন্ধকার গলির স‍্যঁতস‍্যাঁতে দোকানে টিমটিমে আলোয়
বিপনন সাজিয়ে বসে রোজ।
অন্তর্বাসের দোকানে কুলুঙ্গীতে লক্ষী গনেশের ছবি।
সেই গলিতেও নির্দ্ধিধায় যায় মেয়েরা।
নির্বিকার মুখে অন্তর্বাসের প‍্যাকেট নামিয়ে আনে
বলে চলে ,কত সাইজ,কি রঙ কোন কোম্পানি?
না , সেখানেও শ্লীলতা হানি হয়নি কখোনো।
সে দোকানে বৃদ্ধ কেষ্টকাকা এখনো ও বিক্রি করে চলেছে
সাদা কালো লাল গেরুয়া বিভিন্ন রঙের অন্তর্বাস।
অন্ধকার ছায়া ছায়া গলির টিমটিমে আলোর দোকান
হিন্দু ঐ কাকা যুবক বয়স থেকে বৃদ্ধ হলেন
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে নিয়েছেন নারী র সম্মান বোধ।
ফিচেল হাসি, ফিচকে কথা কানে আসেনি ক্রেতাদের।
মহিলা ক্রেতা আর কাকার আঙুলের ব‍্যাবধানে বিনিময় হয়েছে
ন‍্যায‍্য মূল্য আর অন্তর্বাসের প‍্যাকেট।
এরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান ,কেউ বৌদ্ধ কেউ জৈন
এদের শতেক দায়,কর্মবিচ‍্যুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির সময় নেই।
আজও তাই ইব্রাহিম চাচার মেশিন চলে
খটখট খটখট
আজও কেষ্টকাকা র দোকানে হুমড়ি খায় মেয়ের দল।
এদের পেটে আছে অসংখ্য ভাঁজ
খিদের ভাঁজ, সম্মানের ভাঁজ, রোজগারের ভাঁজ।
এদের হয়তো শিক্ষাগত মান, পরিবেশ , কিচ্ছু নেই।
এদের মাথার ভেতর আছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
নারী নিয়ে কারবারি হয়েও তাইমাথার বোধে ভরে নেয়
যোজন দূরত্বের সেমিকোলন।
বাঁচিয়ে চলে নারীর সম্মান,বাধ‍্য করেছে নিজেদের আঙুল
এরাই আমার দেশবাসী, এরাই ভারতবর্ষ।।।

কবিতা নয় বোধ

@টুটুল

পুবের সূর্য উদয় থেকে পশ্চিমে চাঁদের দেখা পর্যন্ত
কর্মবিরতি নেই কোন
তারই মাঝে মন উড়ে যায়।
তাকে টেনে হিঁচড়ে নামিয়ে আনার ব‍্যার্থ প্রচেষ্টা চালাই না।
মন চেয়ে দেখে অনেক দূরের কোন এক বৃদ্ধ দর্জিকে।
চোখে চশমা ,কুঁচকোন চামড়ায় ,কম্পিত হাতে
সেলাই মেশিন চালায় একটানা।
ইব্রাহিম চাচা, দর্জি, বিখ‍্যাত নামী দোকানের কর্মচারী মাত্র।
যুবক বয়স থেকেই ব্লাউজ বানানোতে সুদক্ষ।
পঁচিশের সুদর্শন যুবক তখন ,আমি পনেরো কি ষোল।
তখনও দেখেছি তাকে ,সুনিপুন মাপে ফিতে হাতে।
চাচার ফিতের মাপে আর আঙ্গুলের ফাঁকে যোজন দূরত্ব
সেমিকোলন থাকে।
অথচ সুনিপুন মাপে ব্লাউজ তৈরী করে সে।
লজ্জায় অবনত হতে হয় না মেয়েদের
কুঁকড়ে আসেনা শরীর।
তার মাপের ফিতেই আর আঙুলের ফাঁকে নির্দ্ধিধায়
ঋজুভঙ্গিতে থাকে নারীর সম্মান।
একচুল ও মাপে ভুল হয়না ,নারীর শ্লীলতাও থাকে অক্ষত।
মুসলমান ঐ চাচা ,আজ ও বাঁচিয়ে চলেছে
মাপের ফিতের সাথে বাধ‍্য আঙুলের রেখা।
আর ঐ কালীকাটরার কেষ্টকাকা
অন্ধকার গলির স‍্যঁতস‍্যাঁতে দোকানে টিমটিমে আলোয়
বিপনন সাজিয়ে বসে রোজ।
অন্তর্বাসের দোকানে কুলুঙ্গীতে লক্ষী গনেশের ছবি।
সেই গলিতেও নির্দ্ধিধায় যায় মেয়েরা।
নির্বিকার মুখে অন্তর্বাসের প‍্যাকেট নামিয়ে আনে
বলে চলে ,কত সাইজ,কি রঙ কোন কোম্পানি?
না , সেখানেও শ্লীলতা হানি হয়নি কখোনো।
সে দোকানে বৃদ্ধ কেষ্টকাকা এখনো ও বিক্রি করে চলেছে
সাদা কালো লাল গেরুয়া বিভিন্ন রঙের অন্তর্বাস।
অন্ধকার ছায়া ছায়া গলির টিমটিমে আলোর দোকান
হিন্দু ঐ কাকা যুবক বয়স থেকে বৃদ্ধ হলেন
মস্তিষ্কের কোষে গেঁথে নিয়েছেন নারী র সম্মান বোধ।
ফিচেল হাসি, ফিচকে কথা কানে আসেনি ক্রেতাদের।
মহিলা ক্রেতা আর কাকার আঙুলের ব‍্যাবধানে বিনিময় হয়েছে
ন‍্যায‍্য মূল্য আর অন্তর্বাসের প‍্যাকেট।
এরা কেউ হিন্দু, কেউ মুসলমান ,কেউ বৌদ্ধ কেউ জৈন
এদের শতেক দায়,কর্মবিচ‍্যুতি দিয়ে শ্লীলতাহানির সময় নেই।
আজও তাই ইব্রাহিম চাচার মেশিন চলে
খটখট খটখট
আজও কেষ্টকাকা র দোকানে হুমড়ি খায় মেয়ের দল।
এদের পেটে আছে অসংখ্য ভাঁজ
খিদের ভাঁজ, সম্মানের ভাঁজ, রোজগারের ভাঁজ।
এদের হয়তো শিক্ষাগত মান, পরিবেশ , কিচ্ছু নেই।
এদের মাথার ভেতর আছে বেঁচে থাকার ইচ্ছা।
নারী নিয়ে কারবারি হয়েও তাইমাথার বোধে ভরে নেয়
যোজন দূরত্বের সেমিকোলন।
বাঁচিয়ে চলে নারীর সম্মান,বাধ‍্য করেছে নিজেদের আঙুল
এরাই আমার দেশবাসী, এরাই ভারতবর্ষ।।।

Tuesday, 4 April 2017

শহরের পথ
টুটুল চ্যাটার্জী

কুকুরের হাইতোলা দেখতে দেখতে যাদের রাত পার হয়ে যায়
ধূলোয় শোওয়া তাদের জন্য কতটা পূর্ণিমা ধরে রাখে চাঁদ?
কতটা গভীর জলে স্নান করে চুলের বিন্দু বিন্দু জলরাশি
ছড়িয়ে দেয় তাদের প্রেমিকারা।
হাত বাড়ালেই হাত ঠেকে যায় কুকুরের গায়।
কাঁথা মুড়ি দেয় ক্লান্ত শরীরে আপন খেয়ালে
কুকুর কন্ঠলগ্নী করে।
রাস্তায় যদি যাই একদিন রাত্রি অবসরে
ফুটপাত ডেকে নেবে আদরের অছিলায়
কলম চলবে চিরাচরিত শ্লোগানের প্রথায়।
কাকেদের ঘুম ভাঙার আগে জেগে উঠে যারা
দু মুঠো মুড়ির লোভে তাদের বাচ্চারা
হামা টানে শহর জোড়া উঠোনে।
পাশ দিয়ে ভোরের বার্তা ফেরি করে প্রথম কাগজ ওয়ালা।
তাজা খবর প্রতি দোরগোড়ায়
ধোঁয়া ওঠা চা বেচে সেই লোকটা তাকে তুমি চেনো না
যে আজ সকালে উঠেছে কুকুরের মুখ দেখে।

Thursday, 30 March 2017

একটি অপ্রেম

পাহাড়ের কোল ঘেষে যখন সূর্য অস্তাচলে
পাইন গাছের মাথায় তখন রঙীন আলো উপচে পরে।
তুমি তখন গুনগুনিয়ে সুরের ঘরে আপনমনে
মৃদুমন্দ বাতাস এসে তোমার আঁচল জড়িয়ে ধরে।
ইচ্ছে জাগে মাঝনদীতে নৌকা বিহার অকারনে
এমন সময় জোৎস্না এসে হানা যে দেয় জানলা কোনে।
তোমার আমার ভালোবাসায় ঠিক তখন ই ব্যাকুল বাতাস
বকুল ফুলের গন্ধ এসে ভরিয়ে দিলো মিষ্টি সুবাস।
গীতবিতান কোলের কাছে নামিয়ে রেখে বলছো তুমি
প্রেমের গানের স্বরলিপি এবার থেকে খুঁজবে তুমি।
আমি তখন হৃদয় দিয়ে শুধুই অনুভবের মোহে
মেতে আছি তোমার প্রেমে গীতবিতান একটু ছুঁয়ে
স্তব্ধ সকল ঘরের বাতি, একটু পরেই নামবে রাতি
বাতায়নে উঁকি দেবে চাঁদের সাথে তারার সাথী।
পাহাড় কোলে দুলবে তখন সারি সারি আলোর মালা
দূরে পাইন বনের ধারে বাজবে বাঁশী মনকারা।
বাউল এ মন চাইবে তখন মাঝনদীতে নৌকাবিহার
তুমিও তখন সঙ্গে থেকো তোমার গলায় পরাবো হার।

Wednesday, 29 March 2017

বৃহন্নলা

মিত্তির বাড়ি আজ বহুবছর পর আলোর রোসনাই।হ্যা কারন আজ ওদের একমাত্র বংশধর
রোহনের অন্নপ্রাশন।
খুব ঘটা করেছেন মিত্তির গিন্নী।
স্বামীকে বলেই দিয়েছেন এ ব্যাপারে তার কোন মন্তব্য চলবে না।রেবা তার মনোমতো 'সবরকম
আয়োজন করবে কোন ত্রুটি রাখবে না।
তাই মন ভরে খরচা করেছেন মিত্তির গিন্নী রেবা।
এসব আনন্দের মাঝেও কোথায় যেনো একটা গোপন ব্যাথা কাঁটার মতো খচখচ
করে ।
কত যুগ হয়ে গেছে তবুও যেনো সেদিন টা চোখের সামনে এসে সব আনন্দে একঠা কালো ছায়া
হয়ে অদৃশ্য পর্দা হয়ে ঝুলতে থাকে।
কিছুতেই ভুলতে চেয়েও যেনো ভুলতে দেয় না ।
আর এই তো কদিন আগেই যেনো তা আবার নতুন ভাবে উন্মোচিত হলো।
হ্যা, যেদিন হাসপাতাল থেকে খবর টা এলো যে বিমলের ছেলে হয়েছ।
খুশীতে আত্মহারা হয়ে গেছিলো রেবা আর সনাতন।
সত্যি তারা যেনো হাল ছেড়ে দিয়েছিলো ,এই দশ বছরেও যখন বিমলের স্ত্রীর কোলে কেউ এলো না।
তারা ভেবেই নিয়েছিলো এ তাদের পূর্বকৃত পাপের ফল।
তাই এতদিন বাদে বিমলের স্ত্রীর অন্তস্বতা হওয়ার খবর টা পেয়ে প্রতিপদে আশংকায় থেকেছেন
শেষ রক্ষার জন্য।
তাই যেদিন বাড়ি আনা হলো শিশুকে সেদিন থেকেই সব যত্নের দায়িত্ব রেবা তুলে নিলো
নিজের কাঁধে।
এভাবেই কবেই যেনো দু মাসে পা রাখলো রোহন।

রেবার মনেই নেই দিন কিভাবে কেটে যাচ্ছে।
বাড়ির নীচে সেদিন ঢাক ঢোলের আওয়াজে বারান্দা থেকে উঁকি মেরে দেখে রেবা বৃহন্নলার দল
এসেছে।
তার নাতিকে আশীর্বাদ দিতে।
তিনি হ়াঁক পারেন কাজের মেয়ে মালতীকে, হুকুম দেন অঢেল চাল ,ডাল তেল চিনি
মিষ্টি সাজিয়ে নীচে আসতে।
তিনি নিজেও কোলে করে বাচ্চাটিকে নিয়ে নেমে আসেন।
বৃহন্নলার দল অনেক নাচ গান করে হৈ চৈ ফেলে দেয় ।
তারা কিছু দাবি করার আগেই রেবা মালতীকে বলেন তাদের জিনিস গুলো দিয়ে দতে।
ওরা তো খুব খুশী ।এছাড়াও কিছু শাড়ি, টাকা আর সামান্য সোনাও দেন।
তার খালি একটাই অনুরোধ এই দলটি যেনো মনে কোন অপূর্নতা নিয়ে না যায় ,তার
এতোদিনের এতো সাধের নাতি যেনো সুস্থ ও দীর্ঘায়ু হয়।
অনেক আদর আশীর্বাদের পর ঐ দলটি চলে যায় কিন্তু মালতি গজগজ করতেই
থাকে
সে বলে---এ তোমার বাড়াবাড়ি মা জননী।পঁচিশ হাজার টাকা অতো খাবার দাবার
এতো কিছুর কি দরকার ছিলো।
---তোকে এসব বুঝতে হবে না ,তুই নিজের কাজে যা।এ আমার প্রথম বংশধর
ওর সব সুরক্ষা চাই।
এতো কিছু দেওয়া হয়েছে বলে বিমলের বৌ ও একটু রাগারাগি করে তবে সে
মনে মনে খুশীই হয় এই ভেবে যে তার রোহন ঠাকুমার খুব কাছের জন হয়ে উঠবে

আজ এই উৎসবের দিনে ঐ দিনটা বড় বেশী মনে পড়ছে রেবার।
ওরা ঐদিন চলে যাবার পর আবার সেই ভাবনাটা তাকে আস্ত গিলে খেতে এলো।
রোহনের মুখের দিকে তাকিয়ে সব কষ্ট ভুলতে চান রেবা।
তার অনেকদিনের পুরোন পাপের জন্য এতবছর তার আঙিনা শূন্য ছিলো।
ওদের নখচগান হয়ে চলে যাবার আরো দিন পনেরো পর একদিন দুপুরে
রেবা যখন বসে আছে নিজের ঘরের চেয়ার টাতে,হঠাৎ আবার বাইরে তালির
আওয়াজ।
সচকিত হয়ে উঠে রেবা।
মালতী ছুটে এসে বলে
---মা, ওনারা তো আবার এয়েছেন ,তবে এবার একা।মনে হয় বেশী দাও মারবেন।
তখনি বলেছি যে এতো পেশয় দিয়ো না ,তা শুনলে আমার কথা।যাও দেখো কি চায়।
---বাজে না বকে ওকে উপরে নিয়ে আয়।
---ওপরে আনবো ?কি বলো গো তুমি ।
---যা বলছি তাই কর।
রেবার হুকুমে নীচে গিয়ে ডেকে আনে মালতী ঐ মানুষটিক।
উপরে আসার পর ইশারায় মালতীকে চলে যেতে বলে রেবা । তারপর আগুন্তুকের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে
তাকায় রেবা।
মানুষটি রেবাকে অনুরোধ করে ঘরের দরজা টা বন্ধ করতে ,তার কথামতো রেবা দরজায় ছিটকিনী টা তুলে দেয়।
এবার আগুন্তুক বৃহন্নলা মুখ খোলে।
সে বলতে শুরু করে এক জীবন কাব্য।
---আমি সুজন মা , তুমি হয়তো আমায় চিনতে পারনি আর কি করেই বা পারবে ,সেকী আজকের কথা।
----আমায় তুই ক্ষমা করে দে মানিক আমার ।বিশ্বাস কর আমার কোন উপায় ছিলো না।
সেদিনের পর থেকে একদিনের জন্য ও তোকে ভুলিনি।
----জানি মা ,তোমার দোষ ছিলো না ,সমাজের ভয়ে লোকলজ্জার ভয়ে বাবা তোমার কাছ থেকে আমায় প্রায়
ছিনিয়ে নিয়ে গেছিলেন।তুমি বাধা দিয়েছিলে কিন্তু বাবা ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমার দায় অস্বীকার করেছিলেন।
আচ্ছা ,তোমরা তো আগে উত্তর কলকাতায় থাকতে ,তা এখানে কবে থেকে।
-----তোমার ছোট ভাই এর জন্মের পর থেকে পুরোন সব স্মৃতি ভুলতে এখানে আসা।
----তাই ।আমি সেদিন তোমার নাতির জন্য নাচতে এসেই চিনেছিলাম।আমি চিনেছিলাম আমার মাকে।
পরিচিতি তো কম নয় আমার বাবার।নামকরা এডভোকেট ,তাই ঐ নামটা শুনেই বুঝলাম এই বাড়ির ই আমি একজন।না মা ভয় পেয়ো না ,আজ এতো বছর পরে কোন অধিকার নিয়ে আমি আসিনি।
আজ আমার জগৎ তোমাদের থেকে আলাদা মা।
শুধু ভাবো তো সেদিন কত যত্নে তুমি ঐ মাস দুয়েকের নাতিকে নীচে আনলে যতক্ষন আমরা নাচলাম
ওকে আগলে রাখলে ,আর ঠিক ঐ দু মাস বয়সেই তোমরা আমাকে তুলে দিয়েছিলে আমার জন্য নাচতে আসা
এক বৃহন্নলার হাতে ।সে শুধু তোমার ছবিটা চেয়ে নিয়ে গেছিলো আমায় মা চেনাবে বলে।
সেই থেকে ঐ ছবিটাই আমার মা।তোমাদের যেমন মা কালি ,মা দূর্গা তেমন।
------আর বলিস না, আমি সহ্য করতে পারছি না ।আমি মানছি তোর উপর অন্যায় হয়েছে ।আজ সকলে বিমল কে
আমার প্রথম সন্তান জানলেও আমার মনের আসনে তুই ,শুধু তুই ই আছিস।আমায় ক্ষমা করে দে ।
এখন যে আমার বড় আনন্দের দিন।এতদিন বঞ্চিত করে ভগবান আমায় নাতি দিয়েছেন।তুই কি চাস বল তোকে খুশী মনে সব উজার করে দেবো।
------আমি কিছু নিতে আসিনি মা ,সেদিন সকলের সামনে বলতে পারিনি তাই আজ আবার একা এলাম।বলেই তার কাঁধের ব্যাগ থেকে একটা ছোট্ট সোনালী কৌটো বের করলো আর খুলে ধরলো রেবার চোখের সামনে।
-----দেখো তো মা চিনতে পারো কি না।বিদায়ের দিন আমার হাতে এই দুটো সোনার বালাই তো পরানো ছিলো।
বহু যত্নে তুলে রেখেছিলাম।অনেক কষ্টের মধ্যেও এটা বিক্রি করিনি।
আজ এনেছি শুধু রোহন কে আশীর্বাদের জন্য।
কদিন বাদেই তো ওর অন্নপ্রাশন হবে তখন ওর হাতে পড়িয়ে দিও।শত হোক তোমরা মানো আর না মানো ওতো আমার নিজের ভাইপো।
এতদিন পর তোমরা যেমন আনন্দ করছো এটুকু করে আমায় একটু আনন্দের ভাগ নিতে দাও।
আর তো কোনকিছুর ভাগ নিতে পারছি না।
রেবা কিছু বলার আগেই কৌটো টা তার হাতে দিয়েই দরজা খুলে নেমে যায় সুজন।
******
আলোর রোশনাই, শাঁখের আওয়াজ উলুধ্বনি এসবের ভিতরেও মন টা ক়েঁদে উঠে রেবার।
সবার অলক্ষ্যে বালা জোড়া পড়িয়ে দেন রোহনের কচি হাতে।
তিনি জানেন মিত্তির বাবু যখন কথা দিয়েছেন আজ রেবার কোন কাজের কৈফিয়ত নেবেন না তাহলে তিনি
কথা রাখবেন।
মনে মনে বললেন ,রোহন তোর হাতেই রয়ে গেলো আমার কোল খালি করা সন্তানের স্মৃতি।।।।

টুটুল(শিউলি)